ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন আমির

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৯ জুন ২০১৬

নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন আমির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মোহাম্মদ আমিরের ২৪ বছরের জীবনটা যেন সিনেমার গল্প। যে গল্পে রয়েছে আবেগের বসে এক ‘টিনেজারের’ মারত্মক ভুল করে বসা, নরক অনলে পুড়ে আত্মশুদ্ধির কঠিন সংগ্রামে ব্রতী হওয়া, অতঃপর কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘ওয়ে’র সেই দুর্ধর্ষ নায়কের মতো ফিরে আসা। এত অল্প বয়সে এভাবে ফিরে আসার উদাহরণ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এরই মধ্যে ওয়ানডে-টি২০তে ফিরেছেন। আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের জন্য ডাক পেয়েছেন পাকিস্তান টেস্ট দলেও। কাকতালীয় পাকিরা এবার সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলবে লর্ডসে (১৪ জুলাইÑ২০১৬), এখানেই ছয় বছর আগে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন ১৮ বছরের তরুণ। ভিসা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর নিজেকে ‘অসম্ভব ভাগ্যবান’ বলে অভিহিত করেছেন আমির। প্রায়শ্চিত্তের পথে দেশকে আরও বেশি কিছু দিতে মরিয়া ‘সেনসেশনাল’ বাঁহাতি পেসার। ‘যদি সত্যি বলি, এভাবে ফেরার কথা কখনও ভাবতে পারিনি। পাকিস্তানের হয়ে আবার টেস্ট খেলতে পারব বলে নিজেকে অসম্ভব ভাগ্যবান মনে করছি। সাদা পোশাকের ক্রিকেট নিয়ে আমি শিহরিত। সেই লর্ডস দিয়ে ফিরতে পারছি বলে শিহরণটা আরও বেশি কাজ করছে। কারণ অপরিণত বয়সে করা এক মারাত্মক ভুলে এখানেই আমার ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল। হয়ত কাকতালীয়, কিন্তু ২০১০ সালে যেখানে থামতে হয়েছিল সেখান থেকে শুরু করতে পারাটা হবে আশীর্বাদ। স্পষ্ট মনে করতে পারি, ওই সিরিজে কিছু কাজ বাকি ছিল, এবার সেটা শেষ করতে চাই। আমার একমাত্র লক্ষ্য সিরিজের সেরা বোলার হওয়া, পাকিস্তানকে জয়ী হতে সাহায্য করা এবং চমৎকার স্মৃতি নিয়ে শুরু করা। যা আমাকে নতুন পথের দিশা দেখাবে।’ করাচীতে ক্রিকেটের প্রভাবশালী সাইট ক্রিকইনফোর প্রতিনিধিকে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে আবেগে চোখ ছলছল করছিল আমিরের। বয়স ২৫ পূর্ণ না হলেও এই ছয় বছরে জীবন থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার পর দুরন্ত নৈপুণ্যে যখন জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান তখনকার একটি ঘটনা, আমিরকে নেয়ায় মোহাম্মদ হাফিজসহ একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার ক্যাম্প বর্জন করেছিলেন। হাফিজের পায়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করেছিলেন আমির। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ চেয়েছিলেন। অথচ নিষিদ্ধ হওয়ার আগে তিনি ছিলেন বিশ্বের আলোচিত উঠতি পেসার, তার মাঝে পাকিস্তানীরা গ্রেট ওয়াসিম আকরামের ছাঁয়া দেখতেন। ২০১০ সালে নিজেরেই ভুলে জীবনে অভিশাপ নেমে এসেছিল। তৎকালীন অধিনায়ক সালমান বাট ও অপর পেসার মোহাম্মদ আসিফের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্পট ফিক্সিংয়ে। লন্ডনে জেলও খাঁটতে হয়েছিল (বয়স কম হওয়ায় কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে)। আবার টেস্ট খেলতে পারবেন, আমিরের যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রায়শ্চিত্ত করে আবার ভক্তহৃদয় জয় করতে চান, যেমনটা করেছিলেন আলোচিত সেই সিরিজে, ‘এরই মধ্যে ওয়ানডে-টি২০তে খেলেছি। কিন্তু টেস্টের সঙ্গে তার তুলনা হয় না। এটাই হবে আমার সত্যিকারের ফেরা। আমি ফের লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তুলতে চাই। ইংলিশ ক্রিকেটপ্রেমীদের সমর্থনও ফিরে পেতে চাই।’ যোগ করেন আমির। ২০১০-এ আলোচিত ওই সিরিজে ১৮ বছর বয়সে নিজের প্রথম ইংল্যান্ড সফরে এই লর্ডসেই ৮৪ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন। ১৯ উইকেট নিয়ে ছিলেন সিরিজে পাকিস্তানের শীর্ষ শিকারী, যৌথভাবে পেয়েছিলেন ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’-এর পুরস্কার। স্বপ্ন ও তার মৃত্যুÑ এক সঙ্গে মুদ্রার দু-পিঠ দেখা সেই স্মৃতি আমির ভোলেন কি করে? নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেও ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়ানো ক্রিকেটারের আজীবন নিষিদ্ধ হওয়া উচিত বলেই মনে করেন আমির! সম্প্রতি ইংল্যান্ড অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একথা বলেন তিনি। অতীত ভুলে টেস্টে প্রত্যাবর্তনে কুক-স্টুয়ার্ট ব্রডরা অবশ্য তাকে সাদর আমন্ত্রণই জানিয়েছেন।
×