ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কথা কবিতা গানে আতাউর রহমানের জন্মদিন উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৯ জুন ২০১৬

কথা কবিতা গানে আতাউর রহমানের জন্মদিন উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চের সঙ্গে ভালবাসায় কেটেছে দীর্ঘ পাঁচটি দশক। অভিনয়ের পাশাপাশি সমানতালে দিয়েছেন নির্দেশনা। নাট্যবন্ধুদের ভালবাসায় পেয়েছেন মঞ্চসারথি উপাধি। বার্ধক্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পের সঙ্গে সংসার। তাই তো সত্তর পেরিয়েও তিনি এখনও তরুণ। বয়সে প্রবীণ ও মননে তরুণ এই নাট্যব্যক্তিত্ব হচ্ছেন আতাউর রহমান। শনিবার ছিল তার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো মঞ্চসারথি আতাউর রহমান ৭৫তম জয়ন্তী শীর্ষক অনুষ্ঠান। বিকেল থেকে রাত অবধি গান, কবিতা ও নাট্য পরিবেশনার সঙ্গে তাকে নিবেদিত কথায় জানানো হয় ভালবাসা। সেই সঙ্গে ছিল ফুলেল শুভেচ্ছা। শুভাকাক্সক্ষীসহ আতাউর রহমানের রঙ্গ-রসিকতা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে অনুষ্ঠানে। তাই গুরুগম্ভীর না হয়ে উচ্ছ্বাসময় হয়ে ওঠে আয়োজনটি। শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে এই জন্মদিন উদযাপনের আয়োজন করে আতাউর রহমান জয়ন্তী উদযাপন পরিষদ। প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় আয়োজনকে আনন্দময় করে তোলেন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন ইউসুফ। নাট্যশিল্পীসহ সংস্কৃতির নানা ভুবনের মানুষের করতালির মধ্য দিয়ে মঞ্চে আসেন আতাউর রহমান। নিজের জীবনের নানা ঘটনার উল্লেখের পাশাপাশি রসিকতায় মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। শুরুতেই বলেন, রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসের বিমলা চরিত্রের মতোই আমিও একটু লোভী প্রকৃতির। এই লোভটা দেশের প্রতি ভালবাসা নিবেদনের। একইভাবে শিল্প ও সংসারের প্রতিও আত্মিক বন্ধনের। নাটকের পাশাপাশি বৃদ্ধ বয়সে এসে এখন কবিতা লেখায় মন দিয়েছি। নিজের প্রতি মুগ্ধতার প্রকাশ করে বলেন, মৃত্যুর আগেই আমাকে নিবেদিত সব কথা শুনে যেতে চাই। কথার একপর্যায়ে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রসিকতা করে হাসিয়ে তোলেন সবাইকে। সেই সূত্র ধরে উঠে আসে তার নানার কথা। ফেলে আসা ছেলেবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ‘নানার গল্প’ উপস্থাপন করেন। আতাউর রহমানের অভিব্যক্তি প্রকাশের পর মঞ্চে আসেন অভিনয়শিল্পী ফারহানা মিঠু। পাঠ করেন আতাউর রহমান রচিত ‘স্বপ্নের পাহাড়’, ‘রাতদিন’ ও ‘ভালো আছি’ শিরোনামের তিনটি কবিতা। কবিতার দোলায়িত ছন্দের উচ্চারণ শেষে ভেসে সঙ্গীতের সুর। নন্দিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পরিবেশন করেন দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তার পরিবেশিত আতাউর রহমানের পছন্দের গান দু’টির শিরোনাম ছিল ‘এই লভিনু সঙ্গ তব’ ও ‘জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’। ইংল্যান্ডে চিকিৎসাধীন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তাটি নিজেই পাঠ করেন আতাউর রহমান। এই শুভেচ্ছা বার্তার লাইনগুলো ছিল এরকমÑ হোয়াট এ ম্যাজিক নাম্বার সেভেন্টিফাইভ! তোমার জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা নিও আতা। আইটিআইয়ের সম্মানিত সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, আতাউর রহমানের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে। তার সঙ্গ সব সময়ই আনন্দদায়ক। অনেক জোকস রয়েছে তার ঝুলিতে। এগুলো নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সঙ্কলন লেখার পরামর্শ দিয়েছি তাকে। ইদানীং তিনি নাকি আবার কবিতা লেখাও শুরু করেছেন। শুনেছি ছবি আঁকারও বাসনা হয়েছে তার। এরপর রসিকতা করে বলেন, এর আগে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী দেখেছি; এবার দেখলাম আতাউর জয়ন্তী। পরামর্শ দিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, আতা ভাইয়ের আত্মজীবনী লেখা উচিত। অনুরোধ থাকবে, সেখানে রাশভারি কোন কথা থাকবে না। তিনি বাস্তবে যেমন হাস্যরসিক, ঠিক তেমনই ভাষা হতে হবে। কেরামত মওলা বলেন, আতাউর রহমান এমন নিপুণভাবে নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন যে আমি আর নাট্য নির্দেশনা দেয়ার সাহস পাইনি। তাই নির্দেশনার ক্ষেত্রে তিনি স্বকীয় স্থান গড়ে নিয়েছেন। অভিনয়শিল্পী সারা যাকের বলেন, আসলে ৭৫ বছর তেমন কোন বয়সই নাÑএটা বোঝা যায় আতাউর রহমানকে দেখলে। আতা ভাই এ বয়সে এসেও দারুণ প্রাণবন্ত। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি উপভোগ করছেন। তার কর্মোদ্দীপনা, উৎসাহ দেখে মনে পড়ে রবিঠাকুরের গান ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’। এমন সতেজ হয়েই তিনি আরও অনেকদিন বেঁচে থাকুন। স্মৃতিচারণা ও অভিনন্দন পর্বে শংসাবচন পাঠ করেন শিরীন বকুল। শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে পাঠ করেন বাকশিল্পী শামসুর রাহমান। আতাউর রহমানের ছেলে শাশ্বত রহমান রচিত কবিতা পড়েন পূজা সেনগুপ্ত। শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অভিনয়শিল্পী লাকী ইনামসহ অনেকে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, প্রাচ্যনাট, থিয়েটার আর্ট ইউনিট, দৃষ্টিপাত নাট্য সংসদ, নাট্যধারা, নাট্যপুরান, চন্দ্রকলা থিয়েটার, আরণ্যক, স্বপ্নদল, পালাকারসহ বিভিন্ন নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আতাউর রহমানকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় আতাউর রহমান নির্দেশিত ওয়েটিং ফর গডো ও অপেক্ষমাণ নাটকের খ-াংশ।
×