ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কয়লায় অর্ধেক বিদ্যুত উৎপাদন নীতি থেকে সরছে সরকার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৯ জুন ২০১৬

কয়লায় অর্ধেক বিদ্যুত উৎপাদন নীতি থেকে সরছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কয়লায় অর্ধেক বিদ্যুত উৎপাদন নীতি থেকে সরে আসছে সরকার। বিদ্যুতখাতের নতুন মাস্টার প্ল্যান নিয়ে শনিবার এক সেমিনারে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এর আগে বিদ্যুতের মাস্টার প্ল্যান-২০১০ এ বলা হয়েছিল ভবিষ্যত বিদ্যুত উৎপাদনের অর্ধেক আসবে কয়লা থেকে। সরকার সেই পরিকল্পনা ধরে কয়লা ভিত্তিক বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তবে এখন নতুন মাস্টার প্ল্যান-২০১৫ প্রণয়নের সময় বলা হচ্ছে ভবিষ্যতে কয়লায় বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ হবে ৩৫ শতাংশ। নতুন মাস্টার প্ল্যানে বলা হচ্ছে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এখানে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশই গ্যাস নির্ভরতার কথা বলা হয়েছে। তবে দেশে বড় গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার না হওয়ায় বিদ্যুত উৎপাদনে আমদানিকৃত এলএনজি’র ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির বিকল্প থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার রাজধানীতে বিদ্যুত ভবনে এক সেমিনারে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মাস্টার প্ল্যানের খসড়া উপস্থাপন করে। এতে বলা হয় ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পিক ডিমান্ড হবে ৫০ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানির সংস্থান হবে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন যে পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে তার সবটাই ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। স্থলভাগে এবং সাগরে নতুন গ্যাসের সন্ধান না পাওয়া গেলে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। রাজনৈতিক কারণে দেশীয় কয়লার উৎপাদন না হওয়ায় জ্বালানি সংস্থানের এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হবে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, মাস্টার প্ল্যান কোন বেদবাক্য না এটা প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিবর্তন করে নেয়া যাবে। তিনি বলেন নতুন মাস্টার প্ল্যানে ৩৫ ভাগ কয়লা এবং ৬০ ভাগ গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এর আগে ২০১০ সালে ২০ বছর মেয়াদী পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। ওই পরিকল্পনায় ২০১৬ সালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১১ হাজার ৪০৫ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, চলতি বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল আট হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। একইভাবে প্রবৃদ্ধি হিসেব করে বলা হয় ২০২০ সালে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১২ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট। যদিও মহাপরিকল্পনা ২০১০ এ তা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট। গ্রামীণ এলাকায় সরবরাহে ঘাটতি এবং শিল্প চাহিদা বৃদ্ধি না পাওয়াই এর মূল কারণ বলে মনে করা হয়। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুতের চাহিদা না বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার মাস্টার প্ল্যান ২০১০-এর সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। গত এপ্রিলে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয় জাইকা। জাইকা অর্থায়নে কাজ করছে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। সেমিনারে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মাস্টার প্ল্যানে অবশ্যই অর্থায়ন কিভাবে হতে পারে সেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি বক্তৃতায় দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দেন। মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১০ সালে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন। নতুন এই পরিকল্পনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তাহলে পরিকল্পনা প্রণয়ন আরও ফলপ্রসূ হবে। পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্ল্যান ২০১৫ সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সরকার এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সে অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করবে। বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, সরকার ২০১০ সালে প্রণীত মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে সফল হয়েছে। সাম্প্রতিক ১৫ জুনের সর্বোচ্চ আট হাজার ৭৭৬ মেগাওয়াট উৎপাদনকে রেকর্ড উল্লেখ করে বলেন, আমরা উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করতে পেরেছি।
×