ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মেলার নামে বগুড়ায় চলছে গোল্ডেন ক্যাসিনো

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৯ জুন ২০১৬

আন্তর্জাতিক মেলার নামে বগুড়ায় চলছে গোল্ডেন ক্যাসিনো

সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে ॥ প্রায় দুই বছর ধরে বগুড়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ছদ্মাবরণে প্রশাসনের চোখের সামনে হেন জুয়া নেই যা হচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাদকবাণিজ্য ও প্রকাশ্যে মদ্যপান। গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। এই রমজান মাসেও তা বন্ধ হয়নি। উল্টো জুয়াড়িদের বিনে পয়সায় সেহ্রি ও মধ্য রাতে সকল ধরনের লিক্যুয়ার (তরল মাদক) সরবরাহ করা হয়। নিত্যদিন সাধারণের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এলাকার লোক এই জায়গাটির নাম দিয়েছে বগুড়ার গোল্ডেন ক্যাসিনো। যেখানে বার, জুয়া, নারী- সবই মেলে। প্রশাসন একেবারেই নীরব। জেলা প্রশাসন অফিসে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি বহুবার উত্থাপিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার প্রতিবারই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে কাজের কাজ কিছুই হয় না। কথিত মেলার নামে জুয়ার আয়োজক ও পরিচালনাকারী প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিব্যি সাধারণ মানুষের পকেট খালি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। কথিত এই মেলার নামে গ্যাম্বলিংয়ে বগুড়ার বাইরে বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে লোকজন আসে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার টাকাওয়ালা এই অতিথিদের মনোরঞ্জন ও মদ্যপানের ব্যবস্থা থাকে। এই দুই দিনে বিলাসবহুল হোটেলগুলো বুকিং পাওয়া সহজ হয় না। আরেকদিকে জুয়ার পরিচালনাকারীরা একাধিক আধুনিক প্রাডো পাজেরো জীপ দামী গাড়ি হাঁকিয়ে প্রশাসনের সামনেই ঘুরে বেড়ায়। অর্থের উৎস খুঁজতে আয়কর বিভাগ দুর্নীতি দমন বিভাগও তাদের খোঁজ নেয় না। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ সরকারী দল এবং বগুড়ার ডিসি এসপিকে ছেড়েও কথা বলছে না। বলাবলি হয় তাদের সঙ্গে রথীমহারথীদের হরিহর আত্মার ‘বিশেষ ব্যবস্থার’ সুসম্পর্ক রয়েছে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণে নুরানীর মোড় থেকে মাত্র ১শ’ মিটার দূরে রানার সিটির সামনেই বসেছে এই কথিত মেলা। গত দু’বছর ধরে প্রতিবারই ঢাকঢোল পিটিয়ে কথিত আন্তর্জাতিক মেলা বসানো হয়। তবে মেলায় থাকে না কোন দেশী-বিদেশী স্টল। মনিহারির দোকানের মতো কয়েকটি দোকান সাজিয়ে এর আড়ালে চলে জুয়া হাউজিসহ অন্যান্য অপরাধ। মেলায় প্রকাশ্যে মদ্যপান হয়। নিরাপত্তায় ঘেরা তাঁবুর নিচে বসানো হয় ডাব্বু, চটচটি, ফর, ওয়ানটেন স্যুটিংসহ অন্তত ৩০ ধরনের আইটেম। এর বাইরে শহরে গ্রামেগঞ্জে লটারির টিকেট বিক্রি করে প্রতিদিন বড় বড় পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে মাঝারি পুরস্কার প্রদান করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। রাতে কেবল অপারেটরদের ভাড়া করে লটারি দৃশ্য প্রচার করা হয়। কোন শিশুকে ডেকে এনে ডালা থেকে তার হাতে লটারির টিকেট তোলা হয়। এ সময় চিৎকার করে বলা হয় ‘ওঠাও বাচ্চা’। বগুড়ার মিডিয়াকর্মীরা এই বিষয়টি প্রশাসনকে সরাসরি জানালে তা বন্ধ হয়। তবে গোপনে এখনও তা চলছে। বগুড়ার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে বহুবার প্রতিবাদ করেছে। প্রশাসনকে জানিয়েছে। কিছুই হয়নি। কখনও পুলিশ প্রহরায় এই মেলা চলে। সরকারী দলের চিহ্নিত লোকজন কথিত মেলার সঙ্গে যুক্ত আছে এমনটি লোকমুখে বলাবলি হয়।
×