ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিল্প সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থী সংযোগ কর্মসূচী’

মঞ্চনাটকে দর্শক বাড়াতে কিসসা কাহিনীর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ জুন ২০১৬

মঞ্চনাটকে দর্শক বাড়াতে কিসসা কাহিনীর উদ্যোগ

সাজু আহমেদ ॥ দেশের নাট্য ও সংস্কৃতিচর্চা অনেকটাই রাজধানী ঢাকানির্ভর বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ সেখানেও মঞ্চনাটকের দর্শক সঙ্কট যেন ধারাবাহিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমনকি তথাকথিত বড় দলগুলোকেও তাদের নিয়মিত প্রদর্শনীতেও দর্শক সঙ্কটের কবলে পড়তে দেখা যায়। নতুন নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পর এ সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়। তবে এ দলগুলোর আর্থিক বিষয়টি বিভিন্নভাবে সাপোর্ট পাওয়ায় তাদেরা অতটা ভুক্তভোগী হতে হয় না। কিন্ত অপেক্ষাকৃত নতুন দলগুলোকে সারাবছরই দর্শক সঙ্কট মাথায় নিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারী বা নাট্যদলগুলোর উল্লেখযোগ্য এবং সময়োপযোগী কোন কর্মসূচী চোখে পড়ছে না। তবে এও সত্য যে, পৃথিবীর কোন দেশের দর্শকরা নিজ থেকে নাটক দেখতে আসেন না। নাট্যদলগুলোকেই এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হয়। নাটকের বৈশিষ্ট্য নিয়ে দর্শকদের কাছেই যেতে হয়। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ের মঞ্চনাটকের দর্শক বাড়াতে নাট্যদলগুলোকেই উদ্যোগ নেয়া কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশার কথা, নতুন দু’একটি নাট্য সংগঠন নাট্য দর্শক ফেরাতে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দর্শক সঙ্কট নিরসনে এ বছরের শুরু থেকেই নতুন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ঢাকার মঞ্চে নতুন নাট্য সংগঠন কিসসা কাহিনী। ‘শিল্প সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থী সংযোগ কর্মসূচী’ শিরোনামের এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। নতুন এ কর্মসূচীর ফলে অসংখ্য নতুন দর্শক মঞ্চনাটক দেখতে আসছেন। এ কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যে ৪টি প্রদর্শনী করে ফেলেছে কিসসা কাহিনী। শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এ কর্মসুচীর চতুর্থ আয়োজন সম্পন্ন হয়। এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনীর পর ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন হয়। এটি ছিল নাটকের ১৯তম মঞ্চায়ন। এ আয়োজনেও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে কিসসা কাহিনী সুত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, নতুন এ কর্মসূচীর আওতায় কিসসা কাহিনীর পক্ষ থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এরপর রেজিস্ট্রেশনকারী শিক্ষার্থীদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, সনদপত্র বিতরণ এবং নাটক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। গত ১ জানুয়ারি জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে প্রায় আড়াই শ’ শিক্ষার্থীর অঙ্কিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও কিসসা কাহিনীর নতুন প্রযোজনা ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকের ৮ম মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নতুন এ কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে এ কর্মসূচীতে ব্যাপক সাড়া মেলে। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আমন্ত্রণ হয়। এ কর্মসূচীর প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ অন্যরা। চিত্রকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয় সকাল ১০টায়। এর পর নাট্য প্রদর্শনী শুরু হয় বেলা ১১টায়। এ আয়োজনে রেজিস্ট্রেশনকারী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ছাড়াও সাধারণ দর্শকদেরও অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে নাট্য প্রদর্শনী উপভোগ করতে চাইলে ফোনে আসন নিশ্চিত করে আসতে বলা হয়। কিসসা কাহিনীর চারটিও আয়োজনই সফল হয়েছে। দলের এ কর্মসূচী নিয়মিত চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ কর্মসুচীতে মঞ্চায়িত ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকটি রচনা করেছেন আসাদুজ্জামান দুলাল। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। নাটকে একটি সময় এবং স্থানকে তুলে ধরা হয়েছে। সুখ চান্দের মোড় নামের একটি স্থান থেকে রাস্তা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কামলা নামের শ্রমজীবী মানুষদের নিয়োগ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। সেখানে কামলা নিয়োগের ক্ষেত্রে দালালদের হাতে পড়তে হয় শ্রমিকদের। শেষমেশ তারা বুঝতে পারে মালিকরা তাদের মজুরি নিয়ে ঠকাচ্ছে। দালালরা তাদের শ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের জোর করে শ্রম নেয়া হচ্ছে। সে সময় তারা সে স্থান ত্যাগ করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তাদের লিডার কাশেম গনি তাদের যে পথ দেখায় তাতে শ্রমিকদের উস্কে দেয়ার অভিযোগে মালিকদের হাতে মার খেতে হয়। কিন্তু তাকে মুক্ত করতে আসে শ্রমিকরা। ‘সুখ চান্দের মোড়’ নাটকের অন্যতম সমৃদ্ধি নাট্য আঙ্গিকে ঐতিহ্যবাহী সংযাত্রার উপস্থাপনা। শরীর অঙ্কন এবং অভিনয় শিল্পীদের হাস্যরসাত্মকে পরিপূর্ণ এ নাটকটি অতি সহজেই আকৃষ্ট করে বিধায়, দর্শকরা বারবার নাটকটি উপভোগ করতে আসেন।
×