ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নরসিংদীতে লটকনের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৯ জুন ২০১৬

নরসিংদীতে লটকনের বাম্পার ফলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নরসিংদী ॥ লটকন ফল এখন নরসিংদীর কৃষকদের সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। প্রায় দুই যুগ আগেও জেলার লাল মাটির আধিক্যযুক্ত শিবপুর ও বেলাব উপজেলার গ্রামগুলোর ঝোপঝাড় ও জঙ্গলে অযতœ ও অবহেলায় বেড়ে উঠত এ ফলের গাছ। এখন ওই সব গ্রামে মাঠের পর মাঠজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হচ্ছে শত শত একর জমিতে এ ফল। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও কদর বেড়েছে এ ফলের। মৌসুমী এ ফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এখন অনেকেই। দুই যুগ আগে কোথাও কোথাও বাড়ির আঙিনায় লটকন গাছ দেখা গেলেও বাজারে এ ফলের চাহিদা না থাকায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষের কথা ভাবতে না কেউ। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বাজারে খাদ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ফলের চাহিদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে লটকনের ন্যায্য মূল্য। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এখন রফতানি হচ্ছে নরসিংদীর সুস্বাদু রসালো ফল লকটন। প্রতি বছরই লটকন চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এলাকার কৃষকসহ বেকার যুবকদের। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীর শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। গত বছর জেলার ৫৮১ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৫ হেক্টরে। বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতার বাইরেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনা ও পতিত জমিতে লটকন গাছ রয়েছে যা কৃষি বিভাগের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা নেই। গাছের গোড়া থেকে প্রধান কা-গুলোতে ঝোঁপায় ঝোঁপায় লটকল ধরে। চলতি বছর ফলন ভাল হওয়া ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় খুশি লটকন চাষিরা মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে নরসিংদীর মরজাল ও শিবপুর বাজারে গড়ে উঠেছে লটকনের বৃহৎ বাজার। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে বাজার দুটো থেকে লটকন কিনে নিয়ে যায়। বেলাব উপজেলার উজিলাব গ্রামের চাষী কামরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান উপযোগী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামটাও আশানুরূপ পাওয়া যাচ্ছে। একই গ্রামের লটকন চাষী খোরশেদ মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি মণ লটকন দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। একই উপজেলার রাজারবাগ গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি উৎপাদিত লটকন লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ লতাফত হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নরসিংদীতে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে গত বছর ৯ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন লটকন উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছর এ উৎপাদন বেড়ে তা ১২ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এ লটকন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রফতানি হওয়ায় লটকনের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে লটকন চাষ দিন দিনই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
×