ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার পরিবেশ দূষণ

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৯ জুন ২০১৬

ঢাকার পরিবেশ দূষণ

সর্ববিচারেই ঢাকা বসবাসের অযোগ্য এক নগরীতে পরিণত হয়েছে। ঢাকাকে বাঁচানোর জন্য নানা পদক্ষেপও গৃহীত হয়ে চলেছে। তবু সেসব যথেষ্ট মনে হচ্ছে না, তার কিছু কিছু সফলতার মুখও দেখছে না। ঢাকার পরিবেশ বসবাসের জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কোন্টাকে রেখে কোন্ দিকটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব? বায়ু দূষণের বিষয়টি আমরা অনেক সময় সামনে নিয়ে আসি। তার মানে এই নয় যে পানি দূষণ বা শব্দ দূষণকে আমরা কম গুরুত্ব দিচ্ছি। ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনও আধুনিক হয়নি। কি মানববর্জ্য, কি শিল্পবর্জ্য, কি চিকিৎসাবর্জ্যÑ কোন ক্ষেত্রেই পরিকল্পিত ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ চোখে পড়ে না। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতি করছে, আবার জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে। আর এসবের মধ্য দিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি। রাজধানী ঢাকা এখন মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনও এজন্য কম দায়ী নয়। রিকন্ডিশন্ড ও দুর্বল ইঞ্জিনবিশিষ্ট পুরনো বাস-ট্রাক থেকে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এছাড়া শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, ট্যানারিশিল্প, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, রি-রোলিং মিলের বর্জ্য, রাসায়নিক, ওষুধশিল্প ও মেটাল ওয়ার্কস বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ইটভাঁটি, ব্রেড-বিস্কুট কারখানায় পোড়ানো কাঠ থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া জনাকীর্ণ এলাকায় নানা বিপন্নতার সৃষ্টি করছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, বায়ুদূষণ, অপরিকল্পিত স্থাপনা ও অবকাঠামোসহ নানান কারণে ঢাকার নগরজীবন বিরাট হুমকির মুখে। রাজধানীতে যে কয়টি পরিবেশ দূষণকারী শিল্প-কারখানার অবস্থান, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প তার অন্যতম। বুড়িগঙ্গা নদীর নাব্য হারানো ও দূষণের পেছনে হাজারীবাগের ট্যানারি-বর্জ্যে যথেষ্ট দায়ী। পরিবেশ বিবেচনায় শিল্পটি ঢাকা থেকে অন্য স্থানে সরানোর কোন বিকল্প নেই। শিল্পটি সাভারে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয় প্রায় এগারো বছর আগে। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিদ্যুত ও গ্যাস ব্যবস্থাপনা এবং অবকাঠামো নির্মাণের কাজও সম্পন্নপ্রায়। সিটিপি স্থাপনের কাজেরও সিংহভাগ সমাপ্ত। শিল্প মালিকদের জন্য প্লট বরাদ্দ করে কারখানা স্থানান্তরের জন্য সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের মধ্যে নানা বিষয়ে দ্বন্দ্বের জের এবং বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ার মানসিকতার কারণে শিল্পটি স্থানান্তরে অনেক সময়ক্ষেপণ হচ্ছে যা দুঃখজনক। শুধু নগরের পরিবেশ রক্ষাই নয়, আমদানিকারকদের পক্ষ থেকেও কারখানার পরিবেশ উন্নয়নের বিশেষ তাগিদ রয়েছে। তারপরও ট্যানারি মালিকদের এ বিষয়ে গাফিলতি অত্যন্ত অসমীচীন। আদালতের নির্দেশের পরও কাজ না হওয়ায় এখন প্রতিদিন জরিমানার নির্দেশনা এসেছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে না সরায় ১৫৪ ট্যানারি কারখানাকে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই টাকা তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। শিল্পের বিকাশ এবং উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণের দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা উচ্চ আদালতের রায় মেনে রাজধানীর পরিবেশকে মহাবিপর্যয়ের কবল থেকে রক্ষায় মালিকরা ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
×