ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ এবার হিংসার বিপরীতে নেতৃত্বের উদ্বোধন হোক

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৯ জুন ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ এবার হিংসার বিপরীতে নেতৃত্বের উদ্বোধন হোক

বাংলাদেশে এখন যে খুনগুলো হচ্ছে সেগুলো উটকো, তবে পরিকল্পিত। এ লেখা যখন লিখছি তখন রামকৃষ্ণ মিশনের একজন গুরুকেও উড়ো চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগে সৎসঙ্গ বা ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রমের একজন সেবায়েতকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। এই দুই আশ্রমের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতা বলে কিছু নেই। পাবনার ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রমে দু’দিন কোরান শরীফ পাঠ হয়। রামকৃষ্ণ মিশনের কথাই হলো যত মত তত পথ। ঢাকায় মিশনের ভবন ও জমি দান করেছিলেন নবাব পরিবার। প্রতিদিন শত শত মুসলমান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। দাতব্য চিকিৎসা নেন। প্রসাদ খান। শারদীয় উৎসবে অসাম্প্রদায়িকতার মিলনমেলা গড়ে ওঠে। এমন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে হুমকিতে রাখবে জনগণ? কখনও না। এর পেছনে যে রাজনীতি তার পুরোধা জামায়াত বা জঙ্গীরা হলেও বিএনপিকে ধোয়া তুলসীপাতা ভাবার কারণ নেই। এরা মিলে এমন এক অরাজকতা তৈরি করার কারণ একটা নয়। রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শাস্তি বাংলাদেশের উন্নতি এবং দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের অর্জন তারা মানতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতায় বিফল মনোরথ এরাই আছে এর পেছনে। কোথায় সবাই মিলে রুখে দাঁড়াবে, তা না করে একদল সুশীল কুশীল আর কিছু সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগার বলে এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। তবে কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা? সেটা কি এরা জানেন আদৌ? তার একটা ধারণা আমাদের পূর্ব পুরুষরা দিয়েছিলেন। তারা জানতেনও। মাঝখানে আমরা সবকিছু এমন গুবলেট করে ফেললাম এখন নিজেরাই জানি না আসলে কেমন বাংলাদেশ চাই। এখন তো এমন প্রশ্নও জরুরী কেমন আওয়ামী লীগ চাই? বিএনপির কথা বলছি না, এ কারণে তারা ঘটনাচক্রে সময়ের কারণে গড়ে ওঠা দল। আগেও বলেছি তাদের সরকার গঠন থেকে পতন সবটাই মূলত সময় ও ঘটনাচক্রের শিকার। যে কারণে এত বড় বড় ঘটনা, এত ইস্যুর পরও তারা কোন আন্দোলন করতে পারেনি। তারা নীরব মেজরটি নিয়ে গদিতে আসতে ও আগের মতো শাসন বা দেশ চালাতে পারবে বলে মনে হয় না। তাদের সে জাতীয় নেতা নেই। ফলে আওয়ামী লীগকে নিয়েই ভাবনা বাড়ে। ঘুরপাক খায়। তারা এ দেশ স্বাধীন করার নেতৃত্ব দিয়েছিল। এখনও তারা দাবি করে তারাই এ দেশের সেক্যুলার রাজনীতির ধারক-বাহক। যে দলটি গত দু’বার দেশ শাসন করে এ দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছে তারা এ দেশের চেহারা বা ভবিষ্যত আদল কেমন হবে তা নিয়ে সলিড কিছু বলতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধ, মদিনা সনদ, বাঙালী, বাংলাদেশী, জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী এসব মিলিয়ে তারা কি এখন দিকভ্রান্ত? তাদের ভোটব্যাংক নামে পরিচিত সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দুরা আছে ঘোর বিপদে। জামায়াত-বিএনপি বা জঙ্গী যারাই হোক এরা পুরোহিত সেবায়েত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর জুলুম জবরদস্তি জমি দখল, বাড়ি ভিটে ছাড়া করার ঘটনায় এখন লীগের নেতারাই আগুয়ান। ওপরতলার নেতৃত্বও নীরব। এমন বাস্তবতায় তাদের সামনে যখন রাজনীতি বা নেতা কেউ নেই, হঠাৎ দেখি রানা দাশগুপ্ত আর পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম হাজির। এরা দু’জনেই স্বনামধন্য। রানা দাশগুপ্ত যুদ্ধাপরাধী বিচার ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনেতা, ছিলেন এফডিসির পরিচালক। এরা দেখলাম সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দু নিপীড়নের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভারতীয় মিডিয়া মতে মোদি সমীপে পৌঁছে যাওয়া এ আবেদন এখন সবার কাছে প্রকাশ্য। মুশকিল বা মজার ব্যাপার এই, যে আওয়ামী লীগ সারাজীবন হিন্দুতোষণ আর ভারত প্রেমের জন্য গাল শুনল তার বিরুদ্ধে বা তার আমলে সরাসরি নালিশ গেল ভারতের দরবারে। ভাল-খারাপ জানি না। হয়ত জান বাঁচানো মান বাঁচানোর জন্য এর দরকার আছে। কিন্তু এর ভেতর দিয়ে এটাও বের হয়ে এলো দেশের শাসন বা বুদ্ধিবৃত্তির ওপর কারও কোন আস্থা নেই। ধিক এই বুদ্ধিবৃত্তি। একটা ব্যাপার তো সিরিয়াসলি ভাবায়, এখন যদি হিন্দুরা তা করে, বৌদ্ধরা যায় চীন, জাপান, মিয়ানমারের কাছে, ক্রিশ্চিয়ানরা যায় ইউরোপ, আমেরিকায়, জামায়ত-বিএনপি পাকিস্তান বা আরবের কাছে, তো বাকি রইল কি হাতে? এমন দেশই চেয়েছিলাম আমরা? শেষ ভরসা জাতির জনকের কন্যা। তিনি এর অবসান করতে পারবেন। সম্প্রতি তিনি তা বলেছেনও। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মানুষ পোড়ানো, শাপলা চক্রান্ত, গুপ্তহত্যার ঘটনা সব কিছু একদিন অতীত হয়ে ইতিহাসে ঠাঁই নেবে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে মানুষ প্রাণ দিয়েছিল তাকে কেউ রুখতে পারবে না। একটা হিসাব আমরা কেউই করি না। এ দেশের কোটি কোটি মানুষ হিংসাবিরোধী। তাদের একজোট একসঙ্গে আনতে পারলেই সব ঠিক হতে বাধ্য। আওয়ামী লীগ অনেকদিন তা করেনি। এটাই তফাত।
×