ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন প্রশাসনে তীব্র মতভেদ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ জুন ২০১৬

মার্কিন প্রশাসনে তীব্র মতভেদ

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ৫০ জনেরও বেশি কূটনীতিক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের ওপর সামরিক আঘাত আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারের অস্ত্রবিরতি অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করে যাওয়া রুখতে তারা এক অভ্যন্তরীণ স্মারক সই করে এ আহ্বান জানান। এতে তারা ওবামা প্রশাসনের সিরিয়া নীতির কড়া সমালোচনা করেন। তারা যুক্তি দেখান যে, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি সিরিয়ার সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধেই কাজ করছে এবং আসাদকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করছে। সিরিয়া ইস্যুতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এমন ৫১ জনের মধ্য থেকে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এতে সই দেন। খবর বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের। স্মারকে বলা হয়, সিরিয়ায় অবিরাম সহিংসতায় আমেরিকার নীতি ব্যর্থতার মুখে পড়েছে। এতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে আঘাত করতে বিমান শক্তিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়। দলিলে বলা হয়, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের বিশ্বাসযোগ্য হুমকি না দেখা গেলে দামেস্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে কোন চাপ বোধ করবে না। এরূপ কোন পদক্ষেপ সিরীয় গৃহযুদ্ধের প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির এক আমূল পরিবর্তনই হবে। আর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কর্মপন্থা বদলের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তেমন আলামত দেখা যায় না। ওবামা আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেয়ে বরং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন। সংঘাতের অবসান ঘটাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির নেতৃত্বে চলমান কুটনৈতিক চেষ্টা প্রায় ভেঙ্গেই পড়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্র দফতরের ভিন্নমত চ্যানেলে পেশ করা স্মারকটিতে কিভাবে সিরীয় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের ভিতরকার গভীর মতভেদ ও দীর্ঘায়িত হতাশাই ফুটে উঠেছে। পররাষ্ট্র দফতরের চ্যানেলে অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত তারবার্তা পেশ হওয়া অস্বাভাবিক বিষয় নয়। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কোন অবস্থানের বিরুদ্ধে এত বেশি সংখ্যক কূটনীতিকের এককণ্ঠ হওয়া এক বিরল ঘটনা। এতে এক যৌথ মার্কিন রুশ শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙ্গে পড়ায় সিরীয় শাসকগোষ্ঠীই ফায়দা পাচ্ছে বলে উদ্বেগই প্রতিফলিত হয়। বিরোধীপক্ষ ও সরকারÑ উভয়েই অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছে। স্মারকে উচ্চ পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। কোন কূটনৈতিক সমাধান গ্রহণে আসাদকে বাধ্য করতে কেরি নিজেও সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া মার্কিন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এরূপ চাপ প্রতিহত করেছেন এবং তাকে তার সামরিক কমান্ডাররা সমর্থন করেছেন। আসাদকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হলে পরে কী ঘটবে, তা নিয়ে কমান্ডাররা প্রশ্ন তোলেন। স্মারকে তখন কী করতে হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। স্মারকে কর্মকর্তারা লিখেছেন, আসাদ সরকার আংশিক অস্ত্রবিরতি অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করতে থাকায় কোন রাজনৈতিক সমাধান অর্জনে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ আসাদ তার বিরুদ্ধে লড়াইরত মধ্যপন্থীবিরোধী পক্ষ বা অন্যান্য উপদলের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোন চাপ বোধ করবেন না। সিরিয়ায় স্থিতাবস্থায় সমর্থনযোগ্য নয়, কারণ তা ধ্বংসাত্মক না হলেও গুরুতর মানবিক, কূটনৈতিক ও সন্ত্রাস জড়িত চ্যালেঞ্জ বয়ে আনবে। কিন্তু এটি ওবামা প্রশাসনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তিনি সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোতেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং গৃহযুদ্ধ থেকে বহুলাংশে দূরে রয়েছেন। ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপের বিশৃঙ্খলাময় পরিণতির পর প্রেসিডেন্ট ওবামা মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি যুদ্ধে জড়িত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট পদে তার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী সিরিয়ায় ইসলামপন্থী নয় এমন বিদ্রোহীদের জোরালো সমর্থনদানসহ সেখানে শক্তি দেখানোর নীতি অবলম্বনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। সম্ভবত চিঠিটি কেরির ন্যায় হিলারির উদ্দেশেও লেখা হয়েছে।
×