ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বসুন্ধরায় ভিড় বেশি বিক্রি কম- জমে ওঠেনি কেনাকাটা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৮ জুন ২০১৬

বসুন্ধরায় ভিড় বেশি বিক্রি কম- জমে ওঠেনি কেনাকাটা

রহিম শেখ ॥ বৃষ্টি ছিল না, আবার খুব বেশি রোদও ছিল না। আষাঢ়ের এমন শান্ত পরিবেশে যোগ দিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই তো দিনভর নগরবাসী ছিলেন বিপণিবিতানমুখী। ঈদের আগে শুক্রবার আছে মাত্র আর দুটি। রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবারেই কেনাকাটায় ঝাঁপিয়ে পড়েন নগরবাসী। রাজধানীর বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাথে শুক্রবার সর্বত্রই ছিল উপচেপড়া ভিড়। প্রায় সব মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড়। মানুষ ও যানবাহনের চাপে বিপণিবিতানের সামনের রাস্তাগুলো যানজটে নিশ্চল। দুপুর থেকেই বসুন্ধরা সিটির সামনে সাইনবোর্ড ঝুলল, ‘পার্কিং পরিপূর্ণ’। নিউমার্কেটের দিকে সকাল থেকেই ছিল একই অবস্থা। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিক্রি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতার ভিড়ে সন্তুষ্টির কথা বললেন কোন কোন ব্যবসায়ী। আবার কেউ জানালেন ভিড় আছে, বিক্রি নেই। ক্রেতারা পছন্দের জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন এ দোকান থেকে ও দোকানে। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক ও গাউছিয়াসহ আশপাশের সব কয়টি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। ক্রেতার চাপে দুপুরের পর থেকে অধিকাংশ মার্কেটের পার্কিং ছিল পরিপূর্ণ। ভিড়ভাট্টা ঠেলে একাধিক মার্কেটে প্রবেশের পরও একই চিত্র। মানুষ আর মানুষ। তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভিড় বেশি হলেও বিক্রি তেমন নেই। ঈদের এখনও ১৮ দিন বাকি। ক্রেতাদের অধিকাংশই এখনও অল্প-স্বল্প কিনছেন। পছন্দের জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন এ দোকান থেকে ও দোকানে। কোনটা পছন্দ হলে ছুটছেন অন্য দোকানে। যদি এর চেয়ে ভাল কিছু পাওয়া যায়। মেয়েদের রেডিমেড সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বেশি ঘটছে বলে জানান বসুন্ধরা সিটির ইনফিনিটির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ছেলেদের পাঞ্জাবি ও প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ভালই। তবে মেয়েদের পোশাক বিক্রি এখনও সে অর্থে জমে ওঠেনি। ১৫ রমজানের পর থেকে মেয়েদের পোশাক বিক্রি বাড়বে বলে জানান তিনি। তার কথার সত্যতা পাওয়া গেল বসুন্ধরার নিচতলায় মেয়েদের পোশাকের দোকান ঘুরে। বিভিন্ন নাম ও মডেলের হাজারো কামিজ থাকলেও ক্রেতা কম। তবে দর্শনার্থীই বেশি। একই সঙ্গে দামও বেশি। দেড় থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম একেকটি সালোয়ার-কামিজের। সিটিহার্ট দোকানের কামরুল ইসলাম জানান, হাতে সময় থাকায় মেয়েরা এখনও নিজের পছন্দ অনুযায়ী সালোয়ার-কামিজ দর্জি দিয়ে তৈরিতে আগ্রহী। বসুন্ধরা দ্বিতীয়, তৃতীয় ও সপ্তম তলায় ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া এবং প্যান্টের দোকানে ক্রেতার ভিড় কম হলেও বিক্রি বেশি। দর্জি বাড়ির বিক্রয়কর্মী রেদোয়ান জানান, ছেলেরা বারবার মার্কেটে আসতে চান না। তাই একবারেই কেনাকাটা সারতে চান। ছুটির দিনগুলোতেই আসেন ছেলেরা। ছেলেদের পাঞ্জাবির দাম এসব দোকানে এক হাজার ২০০ থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত। জিন্স প্যান্টের দাম দেড় থেকে চার হাজার টাকা। দেশীদশের দোকানগুলোর পাঞ্জাবির দাম ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। গাউছিয়া ও চাঁদনী চকে একই অবস্থা। সেখানে কিশোরী-তরুণী-নারীদের ভিড়ে পা রাখাই দায়। গাউছিয়ার অধিকাংশ দোকানেই বিক্রি হয় সেলাই ছাড়া থ্রিপিস। কাটিং করা থ্রিপিস কিনে দর্জির দোকানে ক্রেতা পছন্দ অনুযায়ী সেলাই করতে পারেন। তাই কেনাকাটার ধুম লেগেছে গাউছিয়ায়। রেডিমেড যে জামার দাম দেড় থেকে ২০ হাজার টাকা সেই জামা সেলাই ও কারুকাজ ছাড়া এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে এবারও বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা পোশাক। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রি-পিসও বিক্রি হচ্ছে বিপণিবিতানগুলোতে। এবারের ঈদে থ্রিপিসের মধ্যে ইন্ডিয়ান কাসিস, বিনয় ও এলটি থ্রি পিসের চাহিদা বেশি। মার্কেটে বাচ্চাদের পোশাক কেনার জন্য অনেক বাবা-মা আসছেন শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। গাউছিয়াতে এবারের ঈদে থ্রি পিসসহ অন্য কাপড়ের সঙ্গে রয়েছে বাহারি রঙের শাড়ি। প্রতিটি মার্কেটে দেশী কাপড়ের চেয়ে ইন্ডিয়ান শাড়ি ও থ্রি পিসের চাহিদা বেশি। তবে দেশী জামদানি ও সুতি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। বিক্রেতারা জানালেন, এবারের ঈদের মূল আর্কষণ হচ্ছে ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি। হাল্কা ও ভারি রঙের কাজের মিশ্রণ রয়েছে শাড়িগুলোতে। দাম সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। গাউসিয়ায় শাড়ির দোকানে কথা হয় বিক্রেতা মোঃ ইবাহীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগের তুলনায় বিক্রি বাড়ছে। তবে ১৫ রোজার পর আরও ভাল বিক্রি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। নিউমার্কেটের একটি শাড়ির দোকানে কথা হয় মোসলেমা আকতার নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি ঈদেই শাড়ি কিনি। তাই এবারও পছন্দের তালিকায় রয়েছে শাড়ি। কাতান শাড়িই কিনব। কারণ কাতান শাড়ি ঈদ ছাড়াও যে কোন অনুষ্ঠানে পরা যায়। দেখতেও খুব সুন্দর লাগে। শুক্রবার সকালে ঈদের শপিং করতে এসেছিলেন নাঈমা আক্তার ও তার স্বামী ব্যবসায়ী বশির আহমেদ। তারা বলেন, শুক্রবার ছাড়া কেনাকাটা করার উপায় নেই। আগাম ভিড় এড়াতেই মার্কেটে আসা। এই দম্পতি জানালেন, তারা কিনেছেন শাড়ি, থ্রি-পিস ও কিছু জুয়েলারি। ঈদের সময় হওয়ায় দামটা একটু বেশি। স্ত্রী ফাহিমা আক্তার তার ব্যাগের থ্রিপিস দেখিয়ে বলেন, এই থ্রিপিস ঈদের আগে হলে অনায়াসে ২ হাজারে পেতাম কিন্তু সেই থ্রিপিস এখন কিনতে হলো ৩ হাজার টাকা করে। এদিন নিউমার্কেটের ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে তরুণীদের ভিড় দেখা গেল। পোশাক ও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কিনছেন হাল আমলের তরুণীরা। আজিমপুর থেকে নিউমার্কেটে আসা গৃহবধূ সিনথিয়া ইসলাম জানান, পুরান ঢাকায় অনেক বড় বড় দোকান আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমরা নিউমার্কেটে কেনাকাটা করেছি। এখানে দাম খুব একটা যে কম তা নয়, তবে অনেক চেনা দোকান আছে। ধানম-ি হকার্সের বিক্রেতা মিজান মিয়া জানান, আমাদের ক্রেতা বেশিরবাগ নারী। তবে এখনও তেমন ক্রেতার সমাগম হয়নি। তাই বেচাকেনাও খুব ভাল নয় বলে দাবি এই বিক্রেতার। তবে সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম আজিজ সুপার মার্কেট। এখানে ভিড় ও বিক্রি দুটোই বেশি। সাধারণ তরুণ-তরুণী এবং শিক্ষার্থীরাই এ মার্কেটের দোকানগুলোর ক্রেতা। আজিজে বরাবরই মধ্য রমজানে বিক্রি ভাল থাকে। মার্কেটের প্রথম তিনতলায় প্রায় দুই শতাশিক বুটিক হাউসে স্থান পেয়েছে দেশী কাপড়ে তৈরি ঐতিহ্য নির্ভর পোশাক। শুক্রবার ছুটির দিনে আজিজ মার্কেটে তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। বিক্রেতারা জানালেন, আজিজে সিল্কের পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে সুতি, খাদি, সিল্ক এবং তাঁতের কাপড়ের পাঞ্জাবি। হাতের কাজ, কারচুপি, স্প্রে, এমব্রয়ডারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে। এছাড়া দেশী সুতি, তাঁত, খাদি, এ্যান্ডি ও মুগা কাপড়ের তৈরি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, নানা রকম শাড়ি, থ্রি-পিস, টি-শার্টসহ রকমারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ধানম-ির বিভিন্ন মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কেও ছিল ক্রেতার ভিড়। ঈদ মার্কেটের বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই বুটিক-বাটিক দোকানগুলোও। তারাও বাহারি কালেকশনের পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছেন। জমে উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার জায়গা ফুটপাথও। শুক্রবার ছুটির দিনে মার্কেট, বিপণিবিতানের পাশাপাশি ফুটপাথেও ছিল ক্রেতার ভিড়। দুপুরের দিকে নিউমার্কেটের ফুটপাথে নিত্যদিনের হাঁকডাক- ‘এক দাম দেড় শ’, ‘যা নেবেন দেড় শ’ বা ‘এক দাম এক শ’, ‘বাইছা লন এক শ’। শুধু নিউমার্কেট নয়, গুলিস্তান, ফার্মগেটসহ সব ফুটপাথেই কম বেশি ভাল বেচাকেনা হয়েছে।
×