ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১১৫ বছর মৃত্যুঞ্জয় হাইস্কুল ॥ ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৮ জুন ২০১৬

১১৫ বছর মৃত্যুঞ্জয় হাইস্কুল ॥ ময়মনসিংহ

শিক্ষানগরী বলে খ্যাত ময়মনসিংহের প্রাচীন ও উচ্চ শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান মৃত্যুঞ্জয় হাইস্কুল। অবিভক্ত ভারতে ১৯০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও আইনজীবী প্রয়াত অনাথ বন্ধু গুহ তার বাবা মৃত্যুঞ্জয় গুহের নামে শহরের ব্রহ্মপুত্র পাড়ে আদালতপাড়ায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। অনাথ বন্ধু গুহের নামে শহরে এবি গুহ রোড ও স্কুলের নামে মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড নামে সড়ক রয়েছে। ময়মনসিংহে এটিই ছিল প্রথম স্কুল। স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন অমিয় ভূষণ গাঙ্গুলী। ঠিক কত শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলটি যাত্রা করেছিল তা জানা না গেলেও উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক ও রাজনীতিক আবুল মনসুর আহাম্মদ স্কুলের প্রথম মুসলিম ছাত্র ছিলেন এবং তাঁরই উদ্যোগে স্কুলে প্রথম মিলাদ চালু হয়েছিল বলে জানা গেছে। আবুল মনসুর আহাম্মদ ১৯১৭ সালে এই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। শুরু থেকেই স্কুলটির প্রথম শ্রেণী থেকে আজীবনের জন্য ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়া হয়। দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত (১৯৪৭ সাল) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ও নিয়ন্ত্রণে ছিল স্কুলের কার্যক্রম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত ইস্ট পাকিস্তান বোর্ডের অধীনে ছিল মুত্যৃঞ্জয় স্কুল। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে আলোচিত নাম গোপীনাথ দত্ত (১৯৫০-১৯৭৪)। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুকুন উদ্দিন জানান, হিন্দু অধ্যুষিত প্রাচীন ময়মনসিংহ শহর ও ব্রহ্মপুত্র ওপারের চরাঞ্চলের শিশু কিশোরদের শিক্ষা বিস্তারের কথা বিবেচনা করে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময়ে শহর ও শহরের বাইরে থেকে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থীর পদচারণায় স্কুল চত্বর ছিল মুখরিত। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯২৭-১৯২৯ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। সংসদে বর্তমান বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদের বাবা খান বাহাদুর উমেদ আলী ১৯২১ সালে এই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ১৯৩৭-১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ালেখা করেছেন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীতে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি শাহাব উদ্দিন আহম্মদ, দৈনিক সংবাদের সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত বজলুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক রাহাত খান, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ভারতের সাবেক ডেপুটি হাই কমিশনার সঞ্জয় ভট্টাচার্যের বাবা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রধান ড. অরবিন্দু গোস্বামীসহ অবিভক্ত ভারতের বহু খ্যাতিমান রাজনীতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, পদস্থ কর্মকর্তা এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ২০০০ সালে ব্যাপক জাঁকজমকের সঙ্গে স্কুলটি শতবর্ষের উৎসব উদযাপন করে। এতে যোগ দিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ সরকার ও প্রশাসনের অনেক পদস্থ কর্মকর্তা। নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক স্কুলটি জন্মলগ্ন থেকে এককভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে প্রাধান্য পেয়ে এলেও প্রতিযোগিতার বাজারে এখন তাল মেলাতে পারছে না। তারপরও স্কুলটিতে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিজ্ঞান ও মানবিকের পাশাপাশি চালু করা হয়েছে ভোকেশনাল কোর্স ও মাল্টিমিডিয়ার ক্লাসরুম। উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৭ ছাড়াও প্রাথমিকে শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটি জাতীয় করণের দাবি উঠেছে এখন। Ñবাবুল হোসেন ময়মনসিংহ থেকে
×