ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যন্ত্রেও ভেজাল!

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৮ জুন ২০১৬

যন্ত্রেও ভেজাল!

দেশের ছোটবড় ব্যবসায়ীদের বোধহয় নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই নেই। এখানে বিশেষভাবে খাদ্যপণ্যসহ শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ-মাংস ব্যবসায়ীদের কথাই বলা হচ্ছে। অবশ্য এসব ব্যবসায়ও যে হাতে গোনা দু’চারজন সৎ ও নীতিবান ব্যবসায়ী নেই তা নয়। তবে বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী যে অসৎ ও নীতি নৈতিকতা বর্জিত, তা অতীত অভিজ্ঞতায় বার বার প্রমাণিত হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এবারের রমজানেও তার কোন ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা জেলা প্রশাসন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) যৌথ উদ্যোগে ছোট-বড় বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও ভোক্তাদের সতর্ক ও সচেতন করছে গণমাধ্যমে বড় বড় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে। তবে বাস্তবে তেমন কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। প্রায় প্রতিদিনই অপরিচ্ছন্ন, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিবিধ খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে হাতেনাতে ধরাও পড়ছে। জেল-জরিমানাও হচ্ছে অনেকের। বড় বড় সুপার মার্কেটসহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোও এই অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বাদ যাচ্ছে না ইফতারের বাজারও। ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার চকবাজারে মুখরোচক ইফতার সমাগ্রীতেও ঢুকে পড়েছে ভেজাল। খাদ্যপণ্যে এসব ভেজাল চলছে উৎপাদন পর্যায়ে। ব্যবহৃত হচ্ছে ভেজাল তেল-ডালডা-ঘি, পোড়া তেল-মবিল, ভেজালমিশ্রিত আটা-ময়দা-সুজি-গুঁড়া মসলা, চিনির বদলে ঘনচিনি, মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়াদুধ, ভেজাল দুধ, ছানা ইত্যাদি। এর বাইরেও ব্যবহার উপযোগী কাঁচামাল শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, ডিম ইত্যাদিতেও অবলীলাক্রমে ঢুকে পড়েছে ভেজাল। ভেজাল নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্রমাগত লেখালেখির ফলে শাক-সবজি, ফলমূল-মাছ-মাংসে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক ফরমালিন, কার্বাইড, তুঁতে ইত্যাদির অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অতঃপর ফরমালিন নিয়ে শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, বরং সারাদেশেই হৈ-চৈ পড়ে যায়। জনস্বাস্থ্য রীতিমতো হুমকিতে পড়ায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ফরমালিন পরীক্ষার একটি ক্ষুদ্র যন্ত্র আবিষ্কার করে। বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তা বাজারজাত করা হয়। তবে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতায় এতদিনে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত যন্ত্রটিই ভেজাল। অর্থাৎ, এটি দিয়ে আদৌ ফরমালিন শনাক্ত করা যায় না। এই অভিযোগ উঠেছে খোদ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। এই প্রেক্ষাপটে স্বভাবতই ক্রেতা ও বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন এবং এর ফলে ভোক্তাস্বার্থ হচ্ছে উপেক্ষিত। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়। মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফলমূলে ফরমালিন ও অন্যবিধ ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয় প্রধানত পচনশীলতা প্রতিরোধ ও সংরক্ষণের নিমিত্তে। তবে বর্তমানে অনেক পণ্যই, যেমন শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। মাছের উৎপাদনও বেড়েছে বৈকি। পচনশীল বিধায় স্বভাবতই এসব পণ্যের চালান বেশি হলে ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা পড়েন লোকসানের ঝুঁকিতে। খাদ্যপণ্য এবং কাঁচামালে ভেজাল জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর, সন্দেহ নেই। ব্যবসায়ীদেরও এটি বুঝতে হবে। ভেজাল খাদ্যের শিকার হতে পারেন তারাও। তদুপরি, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে জনস্বাস্থ্যকে জিম্মি করা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। অতঃপর তাদের মধ্যে সচেতনতা ও নীতি-নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হবে বলেই প্রত্যাশা।
×