ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী দমনে জনতা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৮ জুন ২০১৬

জঙ্গী দমনে জনতা

টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনাগুলো জনমনে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ শিকার হলেন মাদারীপুরের কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তী। তাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। বুধবার বিকেল মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের এ শিক্ষক নিজ ভাড়া বাসায় হামলার শিকার হন। ঘটনায় প্রিন্স ফায়েজুল্লাহ নামের এক শিবির ক্যাডারকে আটক করে সাধারণ জনতা পুলিশে সোপর্দ করে। তার পকেটে ঢাকার জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারের চাবি পাওয়া গেছে। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কলেজের কাজ শেষে স্থানীয় সোবাহান মুন্সীর ভাড়া বাসায় যান তিনি। বিকেল ৫টার দিকে তার বাসার দরজায় নক করে তিন যুবক। দরজা খোলামাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফায়েজুল্লাহকে ধরে ফেলে। সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী জঙ্গী দমনে সাঁড়াশি অভিযান ঘোষণার পরপরই খুনীরা যেন সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাকে চ্যালেঞ্জ করেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের টার্গেট কিলিং মিশন। এটা চরম বর্বরতা যে, এ ধরনের টার্গেট কিলিংয়ের শিকার প্রায় সবাই নিরীহ সাধারণ নাগরিক। এক সময় মুক্তচিন্তার লেখক-বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মীদের নাম হিটলিস্ট আকারে প্রকাশ করে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। মাদারীপুরের এ ঘটনায় জনগণের প্রতিরোধ এবং একজন হামলাকারীকে ধরে ফেলা দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। জনগণ সচেতন ও সাহস করে রুখে দাঁড়ালে কোন অপশক্তিই যে টিকতে পারে না তার প্রমাণ এ ঘটনা। গত বছর রাজধানীতে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান খুনের ঘটনায় এক খুনীকে ধরে ফেলেছিল জনতা। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিন। দেশের জনগণ সচেতন হলে আমরা দেশকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এগিয়ে নিতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যাশার সঙ্গে মাদারীপুরবাসীর এ প্রতিরোধ দেশবাসীকে উৎসাহিত করবে। সাধারণত এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের কাছ থেকে ‘দায় স্বীকারের’ ঘটনা ঘটে। আইএসের তৎপরতা থাকুক বা না থাকুক, দেশে স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা আছে। আইএস যদি সত্যিই এ দেশে তৎপরতা চালাতে চায়, তাহলে তা চালাবে এ জঙ্গী সংগঠনগুলোর মাধ্যমেই। কারণ এ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএসের আদর্শিক সহযোগী। মাদারীপুরের ঘটনায় আটক ব্যক্তি জামায়াত-শিবিরের কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমান কিলিং মিশনেও যে এরা জড়িত মাদারীপুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। দেশে গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে খোদ জাতিসংঘ নানা সময়ে বিবৃতি দিয়েছে। বরাবরই হত্যাকারীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। টার্গেট কিলিংয়ের মিশনে মাঠপর্যায়ের কিছু সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হলেও মূল পরিকল্পনাকারীদের এখনও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গী ফায়েজুল্লাহ গ্রেফতার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো জনতার প্রতিরোধ। জনগণ সদাসতর্ক থাকবে, অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে। জঙ্গী দমনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক এটা সবার প্রত্যাশা।
×