ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবারও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রেহাই নেই চট্টগ্রামবাসীর

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৮ জুন ২০১৬

এবারও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে  রেহাই নেই চট্টগ্রামবাসীর

আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষা আসন্ন কিন্তু এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) খাল-নালা খনন প্রকল্প। অন্যান্য বছর বর্ষার এক দেড় মাস আগে নালা-খাল খনন কাজ শেষ হয়ে যায়। এবার একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় এখনও খনন কাজ শেষ করতে পারেনি চসিক। অন্যদিকে এবার একটু আগেই বর্ষা শুরু হয়েছে। ফলে এবারও বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নালা-খাল খননে অবহেলায় এবার নগরীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। তবে চসিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইতোমধ্যে তারা নগরীর ৭০ শতাংশ খাল এবং প্রায় ৫০ শতাংশ নালার খনন কাজ সম্পন্ন করেছে। পুরোদমে বর্ষা শুরুর আগে তারা অবশিষ্ট খনন কাজ শেষ করতে পারবেন। ফলে এবার বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। যদিও বাস্তবে সেই পরিমাণ অগ্রগতি চোখে পড়েনি। অভিযোগ উঠেছে, খাল খননে যে পরিমাণ মাটি উত্তোলন করার কথা তার দশ ভাগের এক ভাগও উত্তোলন করা হয়নি। আর যেই পরিমাণ উত্তোলন করা হয়েছে তাও খাল নালার পাশে স্তূপ করে রাখায় বৃষ্টিতে পুনরায় নালা-খালে পতিত হচ্ছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেট বাসিন্দা আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, ওই এলাকার নালাসমূহ হতে যে পরিমাণ মাটি উত্তোলন করার কথা তার দশ ভাগের একভাগও উত্তোলন করা হয়নি। মিয়াখান নগর এলাকার বাসিন্দা রহমত উল্যাহ জানান, ওই এলাকার খাল-নালায় এখনও বেশ মাটি রয়ে গেছে। কিছু অংশে এখনও খনন কাজ শুরুই করা হয়নি। এদিকে বৃষ্টি ঘনিয়ে আসছে। কয়েকদিন পরই বর্ষা শুরু হচ্ছে। এ বছরও হয়ত জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘব হবে না। জানা গেছে, এবার অনেক দেরিতে নগরীর খাল খনন ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করে চসিক। ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করায় অনেকে ধারণা করেছেন চসিক হয়ত মাটি খননের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারবেন না। তবে চসিক কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঠিকাদারদের নিকট থেকে সর্বোচ্চ কাজ আদায়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি সাফল্য আসেনি। এখন পর্যন্ত নগরীর ১৪৪ কিলোমিটার খালের ৭০ শতাংশ খনন কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে নগরীর প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার নালার ৫০ শতাংশেরও খনন কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদাররা খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন করলেও সরানোর ক্ষেত্রে তাদের অনিহা পরিলক্ষিত হয়েছে। খাল-নালা থেকে উত্তোলনকৃত মাটি বাইরে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে থাকায় তারা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্রেতা পায়নি ততক্ষণ পর্যন্ত নালা খালের পাশে মাটি স্তূপ করে রেখেছে। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খালের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার খাল এবং ৪৮০ কিলোমিটার নালা-নর্দমার মধ্যে প্রায় একশ কিলোমিটার নালা খনন ও পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় চসিক। ১৬৩টি প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাল খননে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং নালা-নর্দমা পরিষ্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ১৮ লাখ টাকা। এদিকে চসিক জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল-নালা খননের উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে এর সুফল পাবে না নগরবাসী। এ বছর বর্ষায়ও নগরবাসীকে জলমগ্ন হতে হবে। সরেজমিনের এখনও ডাইভারসন খাল, চাক্তাই খালের চকবাজার ফুলতলা এলাকা, মিয়াখান নগর, চশমা খাল, হিজড়াখালসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও মাটি খনন কাজ সম্পন্ন হয়নি। খালের বিভিন্ন অংশে মাটি থেকে যাওয়ার কারণে তা বাঁধের ন্যায় কাজ করবে। এতে বৃষ্টির পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করবে। অনেক এলাকায় মাটি তুলে খাল-নালার পাড়ে রেখে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি এলেই পানির সাথে গড়িয়ে তা আবারো খাল-নালায় পড়বে। এতে খাল-নালা খননের কাজটি অনেকটা প-ুশ্রমে পরিণত হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। তবে কর্পোরেশনের খাল-নালা খনন কাজের তত্ত্বাবধায়ক যান্ত্রিক শাখার সহকারী প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, প্রক্রিয়াগত কারণ অর্থাৎ প্রকল্প তৈরি, দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ দিতে সময় লেগেছে। এ কারণে এবার খাল-নাখা খনন কাজ শুরু করতে এক বিলম্ব হয়েছে। সময় কম পাওয়া গেলেও সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এ বছর সবচেয়ে বেশি মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা হবে কি হবে না তা স্পষ্ট করে বলার সুযোগ নেই। খাল-নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু এলাকায় নালা-খাল বেখল হয়ে যাওয়ার কারণে প্রশস্ততা কমে গেছে। ওইসব জায়গায় পানি উপচে দুইপাশে জলাবদ্ধতা হতে পারে। নগরীর নিজস্ব ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায়ও কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। নালা-খালগুলো পুরোপুরি খনন করলেও জলাবদ্ধতা বন্ধ করা যাবে না। কারণ চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার পেছনে বঙ্গপোসাগরের জোয়ারের প্রভাব রয়েছে। স্লুইস গেট ছাড়া এর থেকে পরিত্রাণের কোন সুযোগ নেই।
×