ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পান্থ আফজাল

ইতিহাসের লৌহমানবী মারগারেট থ্যাচার

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ১৭ জুন ২০১৬

ইতিহাসের লৌহমানবী মারগারেট থ্যাচার

বিংশ শতাব্দীর দীর্ঘ সময় শাসন করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মারগারেট হিলডা থ্যাচার। সোভিয়েত সাংবাদিকের দেয়া নাম ‘লৌহমানবী’ খ্যাত মারগারেট থ্যাচার আরও ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী। আপোসহীন রাজনীতি ও নেতৃত্বের ধরনের জন্য তাকে এই ‘লৌহমানবী’ খেতাব দেয়া হয়। তিনি যে নীতিগুলোর বাস্তবায়ন করেছিলেন আজ সেগুলো ‘থ্যাচারিজম’ নামে পরিচিত। ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর লিংকনশায়ারের গ্রান্থামে মারগারেট থ্যাচার এর জন্ম। বাবা আলফ্রেড রবার্টস ছিলেন দুটো মুদির দোকানের মালিক। মায়ের নাম ছিল বিয়েট্রিশ ইথেল। তিনিই গ্রান্থামেই বড় হয়েছেন। বাবা স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং মেথডিস্ট চার্চে ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করতেন। তবে তার বাবা ১৯৪৫-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত গ্রান্থামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৪৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেটিভ এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তিনি কলচেস্টারের বি এক্স প্লাস্টিকে রিসার্চ কেমিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি আইসিআইতে চাকরির জন্য আবেদন করেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন এই বলে যে তিনি খুবই উদ্ধত, একগুয়ে ও স্বমতে ভয়ঙ্করভাবে অটল থাকা একজন ব্যক্তি। ১৯৪৮ সালে মারগারেট পার্টি কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং এসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা তার প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে তারা তাকে ডার্টফোর্ডের প্রার্থী হিসেবে আবেদনের জন্য প্রস্তাব করেন যদিও তিনি অনুমোদিত প্রার্থী তালিকার মধ্যে ছিলেন না। মাত্র ২৫ পঁচিশ বছর বয়সে তিনি ডার্টফোর্ডের কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন ডার্টফোর্ড থেকে তিনি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হন তবে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন। একই সঙ্গে সবচেয়ে কম বয়সী এবং একমাত্র মহিলা প্রার্থী হিসেবে মিডিয়া আকর্ষণে সক্ষম হন। এ সময়ই তিনি ডেনিস থ্যাচারকে বিয়ে করেন এবং একই বছর তাদের জমজ সন্তান ক্যারল ও মার্ক জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি মেম্বার অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। তার কৈশোরকালীন সময়েই প্রতিভা এবং কাজের প্রতি অনুপ্রেণার কারণে নিজের মধ্যে ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির জয় লাভের পর তিনি ক্যাবিনেটে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। কনজারভেটিভ পার্টি ১৯৭৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে হারের পর লেবার পার্টি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এর ফলে কনজারভেটিভ পার্টিতে এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পরে। যার ফলে মারগারেট হয়ে উঠেন তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার। তিনি হিথকে প্রথম ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন। দ্বিতীয় ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন হোয়াইট ল-কে। এর ফলে মারগারেট হয়ে উঠেন দলীয় প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। ১৯৭৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কেন্সিংটন টাউন হলে এক বক্তৃতায় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে কঠোর আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। এর উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা ‘ক্রাস্নায়া জাভেজডা’ তাকে আয়রন লেডি বা লৌহমানবী বলে আখ্যা দেয় এবং তিনি আনন্দের সঙ্গে এ উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে লেবার পার্টিকে জনরোষের মুখে পড়তে হয় দেশে বিভিন্ন নাজুক অবস্থা সৃষ্টির কারণে। তারপর একটি সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করা হয় ১৯৭৯ সালে। কনজারভেটিভরা ৪৪ আসন পেয়ে হাউস অব কমনসে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় যার ফলশ্রুতিতে মারগারেট থ্যাচার ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠেন। মারগারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৭৯ সালের ৪ মে, এ সময় তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে এসে ওঠেন। ১৯৮৪ সালে ১২ অক্টোবর সকালে এক হত্যা চেষ্টায় তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। এ হামলায় পাঁচজন নিহত হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর তিনি দুই বছর ফিনচলির এমপি ছিলেন এবং ১৯৯২ সালে তিনি ৬৬ বছর বয়সে হাউস অফ কমন থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিতেন ও বই লিখে সময় কাটাতেন। মারগারেট থ্যাচার ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি লন্ডনের রিজ হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাকে মর্টলেক ক্রেমাটরিয়মে দাহ করা হয়। সে সময় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ উপস্থিত ছিলেন।
×