ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবা সুলতানা

স্মার্ট বাদাম বিক্রেতা নারী

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১৭ জুন ২০১৬

স্মার্ট বাদাম বিক্রেতা নারী

সবাই যেন যে কোন পেশাকে প্রাধান্য দেন সেই প্রবল স্বাধীনচেতা ইচ্ছা জন্মলগ্ন থেকেই। তবে প্রথমে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নগরীর হ্যান্ডসাম ফেরিওয়ালা তাজুল ইসলাম লিখনের ‘ড্রিম ভ্যান’ কথার মনেপ্রাণে সাহস জুগিয়েছে। যে কারণে এক অভিজাত পরিবারের মেয়ে হয়েও লিখনের মতো যে কোন কাজকে মহান ভেবে নগরীর রাজপথে বাদাম বিক্রি শুরু তার। শিশু ভেবে ভুল করলেও বয়স তার কমও নয় আবার। হিসেবে তরুণী। প্রথম দেখায় যে কারোই ফেরিওয়ালা মনে হবে না তাকে। কারণ কানে সাদা হেডফোন, নেভি ব্লু রঙের শার্ট, পায়ে কনভার্স ও পরনে জিন্স, আর কী লাগে! এতেই তো অভিজাত পরিচয়। কাছে গিয়ে দেখা গেল- পিঠে ব্যাগ ও গলায় ঝুলানো বাঁশের মাঝারি ঝুড়ি থেকে ছোট-ছোট ঠোঙ্গায় ভরে বাদাম ফেরি করছেন তিনি। কিন্তু ক্রেতারা তাকে ‘বিক্রেতা’ ভাবতে নারাজ! প্রত্যেকেই অবাক! কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই নাম জানালেন তরুণী- তাহমিনা রহমান। বয়স ২৩। পরিবার ও বন্ধুরা ডাকেন ‘কথা’ নামে। লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। জন্ম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায়। এখন বসবাস ধানম-িতে। বাদাম বিক্রি প্রসঙ্গে তাহমিনা বলেন, ভাল একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে জব (চাকরি) করতাম। জব ছেড়ে বাদাম বিক্রির পেশায় নেমেছি। স্বাধীন জীবন আমার অনেক পছন্দ। সব কাজই মহান। কাজ সবসময় কাজই। কাজের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। বাদাম বিক্রি ও ট্রাভেল এজেন্সির কাজের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি! কারণ দুটি পেশাই আমার কাছে মহান। আর এমন চিন্তা-চেতনাই মানুষকে বদলে দিতে পারে। আমাদের ছোট একটি বাংলাদেশ- এত বড় বড় জব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সব হতাশা ছেড়ে যে কোন কাজে মন দেয়াই উত্তম। অনেকে পণ করেন যে চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এতে করে সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না। হতাশা কাজ করে। আবার অনেকে চুরি-ডাকাতিসহ খারাপ পথ বেছে নিয়ে থাকেন। কিন্তু যে কোন কাজে নিজেকে খুশি রাখতে পারাই ব্যক্তিগত অর্জন। আমি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেছি কিন্তু আমার ভাল লাগেনি। প্রতিদিন রোবটের মতো সময় মেনে চলা আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে এখন নিজে কিছু একটা করছি অনেক ভাল লাগছে। বাদাম বিক্রির মধ্যেও স্বাধীনতা আছে...। তাহমিনা বলেন, ‘আমি বাদাম বিক্রেতা, অনেকে বিশ্বাস করতেই চান না। কেউ কেউ প্রশ্ন করে বসেন- আমি কি কাউকে সাহায্য করতে (তহবিল সংগ্রহ) এসেছি কিনা। তখন তাদের আমি বলি- আমি নিজেকে সাহায্য করতে এসেছি, আই ওয়ান্ট টু ডু সামথিং। বাদাম বিক্রি করে কত টাকা আয় হলো বড় কথা নয়। দেশের সব ছেলে-মেয়েদের আমার বার্তা হলো ‘চলো কিছু একটা করি’। অলস সময়ে বসে না থেকে দেশের সব কাজকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া উচিত।’
×