ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সালিশে বাবা ও ছেলেকে কান ধরে উঠবস

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৭ জুন ২০১৬

সালিশে বাবা ও ছেলেকে কান ধরে উঠবস

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ কথিত চুরির অভিযোগ তুলে রাজশাহীর তানোরের গ্রামে সাবেক এক ইউপি মেম্বার ও তার ছেলেকে পেটানোর পর কান ধরে উঠবস করিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পারিশো-দুর্গাপুর এলাকায় স্থানীয় কামরাগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, এক নারী মেম্বার ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে এ কা- ঘটানো হয়েছে। ভিকটিম সাবেক মেম্বার উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওসমান আলী ও তার ছেলে মতিউর রহমানকে এ শাস্তি দেয়া হয়েছে। বৃদ্ধ বাবা ও ছেলের একসঙ্গে কান ধরে উঠবস করানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। সাবেক ওই মেম্বার অভিযোগ করেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি কান ধরেননি বলে অস্বীকার করলেও ছেলেকে কান ধরানো হয়েছে বলে দাবি করেন। যদিও ফেসবুকের ছবিতে বাবা ছেলের কান ধরার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা পুরোপুরি এড়িয়ে যান তানোরের কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন ও তানোর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। কোথাও ঘটে থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। পরে শুনেছেন স্থানীয়রা এ কা- ঘটিয়েছে। তানোর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকও এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন এ ধরনের কোন ঘটনার খবর তিনি পাননি। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার তালন্দ ইউপির সাবেক মেম্বার ওসমান আলী ও তার ছেলে মতিউর রহমান মসজিদের জন্য অর্থ আদায় করতে মঙ্গলবার সকালে বের হন। তারা উপজেলার পারিশো গ্রামের শফু ম-লের বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাড়িতে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পরেই বাড়ির লোকজন এসে তাদের মোবাইল চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আটক করে। এরপর চুরির অভিযোগ তুলে আশপাশের আরও লোক জড়ো করেন শফুর পরিবারের সদস্যরা। এ সময় বাপ-ছেলেকে ধরে মারপিটও করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ওয়ার্ডের নারী মেম্বার আসেন। পরে চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিনের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। সালিশে ওসমান আলী ও তার ছেলে মতিউর রহমানের নিকট থেকে জোর করে চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পরে তাদের চর-থাপ্পড় শেষে ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো হয়। সীতাকু-ে কিশোরকে পিটিয়ে জখম নিজস্ব সংবাদদাতা, সীতাকু-, চট্টগ্রাম থেকে জানান, সীতাকু-ে মোবাইল চুরির অভিযোগে ইউসুফ প্রকাশ হৃদয় (১৩) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কিশোরের মা রেজিয়া বেগম গত বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে অভিযুক্ত লোকমান সওদাগর, পুত্র মাসুদ ও সাহাবউদ্দিনকে আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে উপজেলার সিরাজ ভূইয়া রাস্তার মাথা পশ্চিম পাড়া এলাকায় লোকমান সওদাগরের মোবাইল চুরি করে প্রতিবন্ধী আবুল কাসেমের পুত্র হৃদয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় মেম্বার আজাদের নেতৃত্বে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় এবং বৈঠকে মেম্বার কঠোর ভাষায় বলেন সরকারী আইনমতে কিশোর ও অবুঝ ছেলের গায়ে আঘাত করা যাবে না। এরপর অভিযুক্ত লোকমান সওদাগর ও তার পুত্ররা বুধবার বিকেলে কিশোর হৃদয়কে বাড়িতে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে একটি ঘরে আবদ্ধ করে ঝুলন্ত ফ্যানের সঙ্গে আটকিয়ে প্লাস দিয়ে হাতের আঙ্গুলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে বুধরার রাতে সীতাকু- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এরপর কিশোর হৃদয়ের প্রতিবন্ধী পিতা থানায় আসতে না পারলেও মা রেজিয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় অভিযুক্ত ৩ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় মেম্বার আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘এ বিষয় নিয়ে আমি সমাজের সর্দার, অভিযুক্ত লোকমান সওদাগর ও কিশোর হৃদয়ের অভিভাবক নিয়ে একাধিক বৈঠক করি এবং ছেলেটি আমার কাছে দোষ স্বীকার করে আর কখনও করবে না বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। আমিও অভিযুক্ত লোকমান সওদাগরকে একাধিকবার বলেছি ছেলেটি ভুলবশত চুরি করলেও সে অবুঝ। আর ওকে কোনভাবে শরীরে আঘাত করা যাবে না।
×