ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দলভিত্তিক নির্বাচনের কারণেই মন্দ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৭ জুন ২০১৬

দলভিত্তিক নির্বাচনের কারণেই মন্দ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সহিংসতা আর অনিয়মের কারণে দেশের ইতিহাসে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবচেয়ে মন্দ নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করেছেন সুজন নেতারা। একই সঙ্গে তারা বলেন, প্রাণহানির ক্ষেত্রে এ নির্বাচনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। সহিংসতা, অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলকও হয়নি। এ কারণে নির্বাচনে ফলাফলও হয়েছে একপেশে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনপরবর্তী সংঘর্ষ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে এখন পর্যন্ত ১৪৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুজন আয়োজিত ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০১৬, একটি সার্বিক মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ মন্তব্য করেন। নেতারা বলেন, ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে এবার যে মন্দ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো এর প্রধান কারণ দলভিত্তিক নির্বাচন। অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে দলীয় অবয়ব দেয়ার চেষ্টা করলেও একই দল থেকে একাধিক প্রার্থী অংশ নেয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কখনই পুরোপুরি রাজনৈতিক পরিচিতি পায়নি। দলীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে এবারের ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে ব্যাপক। দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার ফলে নির্বাচনী আইনানুযায়ী এখন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই মনোনয়ন দিতে গিয়েই ঘটছে বাণিজ্যের ঘটনা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসমূহের মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রবণতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। মনোনয়ন বাণিজ্যের এ ঘটনা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলে থাকলেও আওয়ামী লীগে এর ব্যাপকতা অনেক বেশি। ক্ষমতাসীন দল থেকে যে একবার মনোনয়ন পেয়েছে সে প্রার্থী নির্বাচনে জেতার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। ফলে মনোনয়ন বাণিজ্যে টাকার খেলা হয়েছে অনেক বেশি। সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়Ñ এবারের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রেও অতীতের যে কোন সময়ের রেকর্ড অতিক্রম করেছেন। অতীতের নির্বাচনগুলোতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ছিল একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। নির্বাচনী আইনানুযায়ী তা দোষের কিছু না। তবে অতীতের সকল রেকর্ড ম্লান হয়ে গিয়েছে এবারের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যার কাছে। এবারের নির্বাচনে ২১৪ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ২৯ জন, চতুর্থ ধাপে ৩৫ জন, পঞ্চম ধাপে ৩৯ জন এবং ষষ্ঠ ধাপে ২৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২ জন স্বতন্ত্র এবং অবশিষ্ট ২১২ জনই ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত। নির্বাচনী ফলাফল সম্পর্কে মূল্যায়ন তুলে ধরে বলা হয় ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। ফলাফল হয়েছে একপেশে। ৬ ধাপে নির্বাচন হয়েছে ৪ হাজার ১০৪ ইউপিতে। ফলাফল ঘোষিত হয়েছে ৪ হাজার ইউনিয়নের। স্থগিত আছে ১০৪টি ইউনিয়নের ফলাফল। ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২ হাজার ৬৬৭টি ইউপিতে, বিএনপি ৩৬৭টিতে, জাতীয় পার্টি-জাপা ৫৭, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৮, জাতীয় পার্টি-জেপি ৫, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১, জাকের পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৮৮৮টি ইউপিতে জয়লাভ করেছেন। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি নির্বাচনে সবার জন্য সমান পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায়। নির্র্বাচনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের চিত্র একবারেই হতাশাজনক ছিল। বিভিন্ন মহল থেকে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তা ব্যাপকমাত্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলো নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা বলে আসলেও বাস্তবে এ নির্বাচনে উল্টো চিত্রটি দেখা গেছে।
×