সংসদ রিপোর্টার ॥ সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা তৃণমূলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এমপিদের অনুকূলে এক শ’ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ এবং ঈদ বোনাস দাবি করেছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, বারাক ওবামা, ডেভিড ক্যামেরুনসহ বিশ্ব নেতারা সবাই বলছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিস্ময়কর গতিতে। শুধু উন্নয়ন দেখতে পান না বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। দেশ যাতে আর এগিয়ে যেতে না পারে সেজন্যই তিনি এখন গুপ্তহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব করে তিনি কোনদিন জনসমর্থন আদায় করতে পারবেন না, প্রতিবারই জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবেন।
ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দলের মোতাহার হোসেন, এম এ মালেক, ডা. ইউনুস আলী সরকার, বেগম হুসনে আরা ডালিয়া, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বেগম রহিমা আক্তার, গোলাম মোস্তফা, আবদুল মালেক, এ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, বেগম আক্তার জাহান, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, এ্যাডভোকেট সামসুন নাহার এবং জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন। আলোচনা শেষে সংসদ অধিবেশন আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন বেসরকারী স্কুল-কলেজে এমপিদের সভাপতি না থাকার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা (এমপি) থাকব না, থাকবে কী ইউএনও সাহেবরা? সংসদে যারা আছেন সবাই কিন্তু ভোটের মাধ্যমে এসেছি। আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের চাইতে এলাকার উন্নয়ন আর কেউ চাইবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি এটা মানিও না। অন্যান্য বিভাগের ন্যায় উত্তরবঙ্গে একটি মেগা প্রকল্প থাকা দরকার দাবি করে তিনি বলেন, দেশের ৭টি বিভাগ রয়েছে। এরমধ্যে ১০টি মেগা প্রজেক্ট নেয়া হলো। তাহলে উত্তরবঙ্গেও একটা প্রকল্প থাকা দরকার। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কোন উদ্যোগ নেই। সরকারী ব্যাংকগুলোতে বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, কিন্তু কোন বিচার হয়নি। ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের অর্থের জোগান দেয়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছে- যত পারো লুট করে খাও, টাকা লাগে দেবে গৌরী সেন! ব্যাংক লুটপাট করবে আর প্রতিবছর সরকার বাজেটে অর্থ দেবে এটা হতে পারে না।
বিভিন্ন উৎসবে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ঈদ বোনাসের দাবি জানিয়ে সরকারী দলের সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকার বলেন, দেশের সবাই ঈদ বোনাস পান। কিন্তু আমরা কেন বোনাস পাই না। আমরা সবাই বোনাস চাই। এ সময় উপস্থিত এমপিরা টেবিল চাপড়িয়ে তাঁর দাবিকে সমর্থন করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। আমি বিশ্বাস করি, এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। বিএনপি নেত্রী বলেন, বাংলাদেশ নাকি পিছিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বারাক ওবামা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ডেভিড ক্যামেরুন বলেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, শুধু আমাদের ‘ভিলেজ গ্রাজুয়েট’ খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে না।
ভিলেজ গ্রাজুয়েটের অর্থ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের উত্তরবঙ্গে ক্লাস ফাইভ ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর যারা এসএসসি পাস করতে না পারে তাহলে তাকে আমরা বলি ‘ভিলেজ গ্রাজুয়েট’। আসলে এই মহিলা (খালেদা জিয়া) হচ্ছেন ভিলেজ গ্রাজুয়েট। তাই এই মহিলা কথায় কথায় বলেন, ‘হাছিনা, হাছিনা। আরে হাছিনা কি তাঁর কাজের বুয়া নাকি? ভদ্রতা নিয়ে তাঁর কথা বলা উচিত।’
আবদুল মালেক বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাবিহীন নির্বাচন চান। এর মানে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে এখনও হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুর রক্তের সকল উত্তরাধিকারকে শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। খালেদা জিয়াও একই কাজ করছেন।
নাভানা আক্তার বলেন, যে নেত্রী (খালেদা জিয়া) বাবা-মা’র চোখের সামনে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, নিরীহ শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে উল্লাস করেন, সেই নেত্রীকে বাংলাদেশের জনগণ আর কোনদিন মেনে নেবে না। আসলে এমন খুনীর স্থান বাংলাদেশে হতে পারে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: