ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তারা হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৭ জুন ২০১৬

তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তারা হতাশ

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পতœী মাহমুদা খানম মিতুর চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের ঘটনা উদ্ঘাটনে এ পর্যন্ত যে শেষ আশাটি ছিল তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান। এ হত্যাকা-ের ঘটনায় সন্দেহজনক দুইজনকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে শাহজামান রবিন এবং সর্বশেষ গ্রেফতারকৃত জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ফুয়াদ মোহাম্মদ বুলবুল ওরফে আহমেদ। গুন্নুকে গ্রেফতার করা হয়েছে হাটহাজারী থেকে। তার ব্যাপারে সন্দেহ, সে এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। তার রিমান্ডের আবেদন বাতিল করার জন্য তার পক্ষে আদালতে যে আবেদন করা হয় শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার তা খারিজ হয়েছে। এছাড়া শাহজামান রবিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিলিং স্কোয়াডের তিন সদস্যের একজন সন্দেহে। অপরদিকে, জেএমবি সদস্য হিসেবে গ্রেফতারকৃত বুলবুলকে এ মামলায় শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে জেলে বসে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা এবং এ সংক্রান্তে একটি চিরকুট পাঠানোর অভিযোগে। রবিনের ৭ দিন এবং বুলবুলের ৫ দিন করে রিমান্ড চলছে। রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত সংস্থা ডিবি এবং বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। গুন্নুকে শীঘ্রই রিমান্ডে আনা হচ্ছে। আইজির নির্দেশে গঠিত ৫টি তদন্ত কমিটি মূল তদন্ত সংস্থা ডিবির তদন্ত কর্মকর্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারসহ তদন্ত সংস্থায় জড়িত কর্মকর্তারাই অভিন্ন সুরে স্বীকার করেছেন, এ পর্যন্ত তদন্তে কোন অগ্রগতি আসেনি। রবিন থেকে এ হত্যাকা- সংক্রান্ত কোন তথ্যের স্বীকারোক্তি এখন পর্যন্ত মেলেনি। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ শ্যোন এ্যারেস্ট জেএমবি সদস্য রিমান্ডের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার পিবিআই সদস্যদের যেসব বক্তব্য দিয়েছে তাতে পুলিশের ইতোপূর্বেকার সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। পিবিআই এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃত তিন আসামির ব্যাপারে যে সন্দেহ আবর্তিত হয়েছিল তাতে তদন্ত কর্মকর্তারা হতাশ। যেসব প্রক্রিয়ায় সাধারণত রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সবই একই পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। কিন্তু মিতু হত্যাকা-ের কোন ক্লু আসছে না। গুন্নুর ব্যাপারে গ্রেফতারের পর পরই নানা অভিযোগ উঠেছে। তাতে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে গুন্নুকে এ হত্যাকা-ের আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়েছে। সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সূত্রে এখন ভিন্ন সুরে নানা সন্দেহের কথা প্রকাশ করা হচ্ছে। পিবিআই নতুন একটি তথ্যের ভিত্তিতে আজ শুক্রবার থেকে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করছে। পাশাপাশি বুলবুলের জিজ্ঞাসাবাদও অব্যাহত থাকবে। তদন্তে সহায়তার জন্য যে ৫টি কমিটি করা হয়েছে সে কমিটির সকল সদস্যই এ ঘটনায় সামান্যতম কোন সুনির্দিষ্ট ক্লু মিলছে না বলে স্বীকার করছেন। আবার আশাও ছাড়ছেন না। বিলম্বে হলেও মিতু হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তারা আশাবাদী বলে দাবি করছেন। অপরদিকে, পুলিশের অন্যান্য সূত্র বলছে, মিতু হত্যাকা-ে এ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ ছাড়া অন্য কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজে পিবিআই ৫ জনকে টার্গেট করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে, তদন্ত সংস্থা ৯ জনকে টার্গেট করে গ্রেফতারের জন্য তৎপর রয়েছে। কিন্তু এদের কাউকে ঠিক স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। শারীরিক গঠন, পরিধেয় বস্ত্র, মুখাবয়ব এবং হেয়ার স্টাইল পর্যবেক্ষণ করেই আসামিদের নির্দিষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া আর সামান্যতম কোন অগ্রগতি এ মামলার তদন্তে আসেনি। এসপি পতœী মিতুকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকার যে স্থানে হত্যা করা হয়েছে সে স্থানটি কয়েকটি ইট দিয়ে আড়াআড়ি করে একটি কাঠিতে কাপড় বেঁধে রাখা হয়েছে। যা চিহ্নিত হচ্ছে কিলিং স্পট হিসেবে। কিন্তু কিলিং স্পটের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন এ পর্যন্ত যে তিনজনকে গ্রেফতার করে আশার আলো দেখা যাবে বলে মনে করা হয়েছিল তা একে একে নিভে যেতে শুরু করেছে। ফলে নতুন সন্দেহের আসামি গ্রেফতারের দৌড় শুরু করছে পিআইবি আজ থেকে।
×