ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদ্ধ পরিবেশে বাচ্চা ফুটিয়েছে সাইবেরিয়ান বালিহাঁস ॥ অকুস্থল রাজশাহীর চিড়িয়াখানা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ জুন ২০১৬

বদ্ধ পরিবেশে বাচ্চা ফুটিয়েছে সাইবেরিয়ান বালিহাঁস ॥ অকুস্থল রাজশাহীর চিড়িয়াখানা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত বদ্ধ পরিবেশে বাচ্চা ফোটায় না। তবে ৮/১০ বছরের মধ্যেই বদ্ধ পরিবেশে নিজেকে খাপ নিয়ে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ডিম পেড়ে বাচ্চাও ফুটিয়েছে পরিযায়ী পাখি সাইবেরিয়ান বালিহাঁস। পার্কের লেকে বাচ্চাদের ভাসিয়ে এখন চরে বেড়াচ্ছে হাঁসের দল। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, শীতের মৌসুমে প্রতিবছরই বাংলাদেশে আসে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি বা পরিযায়ী পাখি। এদের মধ্যে একটি প্রজাতি বালিহাঁস। এই বালিহাঁসগুলো সাধারণত বদ্ধ পরিবেশে বাচ্চা দেয় না। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। কর্তৃপক্ষের দাবি বদ্ধ পরিবেশে এমন বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা বিরল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আমিনুজ্জামান মোহাম্মদ সালেহ রেজা বলেন, অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত খাবার ও বাসা তৈরির ব্যবস্থা থাকলে বাচ্চা ফোটাতে পারে। দেশে অনেক পরিযায়ী পাখি বাসা বাঁধে এবং বাচ্চা ফোটায়। তবে বদ্ধ পরিবেশে বালিহাঁসের বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা এটাই প্রথম। তিনি বলেন কলিম পাখির মতো অনেক পরিযায়ী পাখি এখন গৃহপালিত পাখিতে পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানার মধ্যে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে এভাবে প্রাণীদের জন্য প্রজননের ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া প্রাণী এবং পাখির বংশ বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখবে। তিনি জানান, প্রচ- শীতের কবল থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখি আসে এ দেশে। বিশেষ করে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, কাশ্মীর, মঙ্গোলিয়া, ইউরোপ, এশিয়া অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের কিছু জায়গা থেকে আসে। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গত ৮ থেকে ১০ বছর যাবত চার জোড়া ন্যাটিপাস করোনাডোলাস জাতের বালিহাঁস রয়েছে। এর মধ্যে একটি বালিহাঁস এবার পাঁচটি বাচ্চা ফুটিয়েছে। পাখির জন্য ঘেরা লেকে বালিহাঁস তার পাঁচ বাচ্চা নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। রাজশাহী চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের খাবার এবং পরিচর্যার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা ইনচার্জ ড. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, বদ্ধ পরিবেশে প্রাণী এবং পাখির জন্য উপযুক্ত বসবাসের পরিবেশ দেয়া গেলে তারা এখানেও স্বাভাবিক বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। চিড়িয়াখানায় এই পাখি যাতে বাসা বাঁধতে পারে এবং ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা ফোটাতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য পাখির খাঁচায় মাটি তুলে ঘাসের চাষ করা হয়েছে। খড় দিয়ে বাসা বানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড. ফরহাদ উদ্দিন জানান, রাজশাহী চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সবগুলোর যতœ নেয়া হয়। প্রজননের ব্যবস্থাও করা হয়। দীর্ঘদিন বদ্ধ পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে সাইবেরিয়ান বালিহাঁস বাচ্চা ফোটানোয় তাদের মনে নতুন করে আশা জেগেছে বলে জানান এই পাখি গবেষক।
×