ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও ফল প্রদর্শনী উদ্বোধনীতে তোফায়েল

আওয়ামী লীগকে টার্গেট কিলিংয়ে দায়ী করে খালেদার বক্তব্য অশালীন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৭ জুন ২০১৬

আওয়ামী লীগকে টার্গেট কিলিংয়ে দায়ী করে খালেদার বক্তব্য অশালীন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নেয়া পণ্যের বহুমুখীকরণ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে। এজন্য সরকার নন-ট্রাডিশনাল (অপ্রচলিত) পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির ওপর জোর দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কৃষিপণ্যের জন্য ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাটপণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কৃষিপণ্যের তালিকায়। আর চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশই এখন বিভিন্ন দেশে চাল রফতানি করে। এবার নজর দিতে হবে অপ্রচলিত কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ওপর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় দেশজ ফলের অবদান’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৬ উদ্বোধন উপলক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন এমপি। বাণিজমন্ত্রী বলেন, ৭২-৭৩ সালে আমাদের রফতানির তালিকায় ছিল মাত্র ২৫ পণ্য। যা রফতানি হতো ৬৮ দেশে এবং আয় হতো মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এখন আমরা রফতানি করি ১৯৬ দেশে। চলতি বছরে রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা (৩৩.৫ বিলিয়ন ডলার) ধরা হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক হতাকা- নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, টার্গেট কিলিংয়ের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়া জঙ্গীদেরই পক্ষ নিচ্ছেন। বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে খালেদা জিয়া যে ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন তা ‘অশালীন’ বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশী ফলের মানোন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। ফলের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, স্বাদ বাড়ানো এবং পচনশীলতা রোধ, এ তিনটি কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ ফলে আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফল ওয়ালমার্টে পাওয়া যাবে- এক সময় এটা অকল্পনীয় ছিল। ফল বেহেশতের নেয়ামত। আল্লাহর রহমতে চালের পর আমরা মৌসুম বিশেষে ফলেও উদ্বৃত্ত হতে যাচ্ছি। এখন এসব ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের মোট চাষাবাদযোগ্য জমির মধ্যে ফলের আওতায় মাত্র ১-২ শতাংশ জমি রয়েছে। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে মোট ফসলভিত্তিক আয়ের ১০ শতাংশ আসে ফল থেকে। প্রচলিত ও বিদেশী ফলের চাইতে অপ্রচলিত দেশী ফলে পুষ্টিগুণও বেশি। বর্তমানে মোট চাহিদার ৬৪ ভাগ ফল দেশে উৎপাদিত হয়। গত কয়েক বছরে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির হার বেড়েছে। প্রাপ্যতা সময়কাল খুবই কম, তাই প্রচলিত দেশী ফলের সংরক্ষণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া উচিত। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মইনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান ও ড. আমজাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে খামারবাড়ি আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দিন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়। র‌্যালি শেষে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অডিটরিয়াম চত্বরে ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৬ উদ্বোধন করেন এবং স্টল পরিদর্শন করেন। প্রায় ১৩০ প্রজাতির ফলের একাধিক জাত এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল বসেছে ৭৫। ফল প্রদর্শনী চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষের চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ‘অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান, দেশী ফল বেশি খান’।
×