ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গুপ্তহত্যায় প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৭ জুন ২০১৬

গুপ্তহত্যায় প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে দেশের মানুষ রুখে দাঁড়াচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গুপ্তহত্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছেন। এতদিন তিনি পরোক্ষভাবে গুপ্তহত্যাকারীদের সমর্থন দিয়ে এখন প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। মাদারীপুরে হাতেনাতে এক গুপ্তঘাতককে ধরেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের আন্দোলনে ব্যর্থ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন হতাশায় ভুগছেন। আর হতাশাগ্রস্ত হয়ে উনি এখন একদিকে সাধারণ জনগণকে টার্গেট করছেন, অন্যদিকে জঘন্য মিথ্যাচার করছেন। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার মাধ্যমে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরচক্র গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গুপ্তহত্যাকারীদের রুখে দেয়া হবে। আগামী ১৯ মে দেশে চলমান গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে ১৪ দল আয়োজিত দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী সফল করতে বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মাদারীপুরে একজন শিক্ষককে হত্যা করার জন্য হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু একজন মহিলা (যার বাড়িতে শিক্ষক ভাড়া থাকতেন তাঁর স্ত্রী) সাহস করে মানুষকে জড়ো করেছিলেন। এরপর এলাকার জনগণ তাড়া করে এক ঘাতককে হাতেনাতে ধরেছে। এটি উৎসাহব্যঞ্জক এবং সাহসী পদক্ষেপ। এ সময় ১৪ দলের পক্ষ থেকে সাহসী মহিলাসহ মাদারীপুরবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, মাদারীপুরের ঘটনায় যে ধরা পড়েছে সে শিবিরকর্মী। তার পিতা তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কয়েকদিন আগে থানায় একটি জিডি করেছিলেন। কিন্তু কী কারণে করেছেন সেটা আমরা জানি না। ওই ঘাতক কলেজের ছাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে একটি এ্যাসাইনমেন্টে গিয়েছিল মাদারীপুরে। যেখানে একজন ধরা পড়েছে আর দু’জনও ধরা পড়বে। এতেই প্রমাণ হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট গুপ্তহত্যায় লিপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯ তারিখ ঢাকাবাসীকে দেখাতে হবে আমরা শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আছি। এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে শেষ লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে মানুষকে সম্পৃক্ত করে যাব। গুপ্তহত্যায় খালেদা জিয়া প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছেন অভিযোগ করে ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ইফতার মুখে নিয়ে রোজাদার এক মহিলা (খালেদা জিয়া) কিভাবে মিথ্যাচার করছেন তা দেশবাসী দেখছে। তিনি কিভাবে অশ্রাব্য ভাষায় শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করছেন! খুন করে যারা ধরা পড়ছেন তাদের পরিচয় পাচ্ছে মানুষ। আর উনি বলছেন আওয়ামী লীগই খুন করছে। তিনি নন-ইস্যুকে ইস্যু বানাতে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। ঐক্যের প্রতীক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে ১৪ দল। সভায় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া আমেরিকার ফ্লোরিডায় হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করছেন। তা ভাল কথা, প্রধানমন্ত্রীও এর নিন্দা করেছেন। কিন্তু তিনি ফ্লোরিডার খুনের প্রতিবাদ করলেন আর বাংলাদেশে এতগুলো খুনের ঘটনায় একবারও নিন্দা করলেন না কেন? বরং আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ দিচ্ছেন। এ হলো খালেদা জিয়ার রাজনীতি। এতে প্রমাণ হচ্ছে এতদিন তিনি পরোক্ষভাবে গুপ্তহত্যাকারীদের সমর্থন দিয়ে এখন প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘সন্ত্রাসী রানী ও মানসিক বিকারগ্রস্ত’ আখ্যায়িত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে উনি নতুন কৌশলী হিসেবে মিথ্যাচার করছেন। আসলে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের মিত্র বিএনপি-জামায়াত দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বলেন, হত্যা, ক্যু ও সন্ত্রাসের রাজনীতি কখনও সফল হতে পারে না। জনগণের শক্তি বিজয়ী হবেই। প্রকৌশলী মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল প্রকৌশলী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুছ ১৪ দলের কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সারাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল আলম বলেন, শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে ১৪ দলের কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। মানববন্ধন কর্মসূচী সফল করতে সারাদেশের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করবেন। জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ সুনাম অর্জন করছে। তিনি বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন ১৪ দল জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে অপশক্তির অপতৎরপতা রুখে দেবে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান বলেন, চিকিৎসক সমাজ অতীতের ন্যায় আগামী ১৯ জুনের মানববন্ধন কর্মসূচীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আমিনুল ইসলাম আমিন, এসএম কামাল হোসেন, এনামুল হক শামীম, আসলামুল হক আসলাম এমপি, হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপি, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) এজাজ আহমেদ মুক্ত, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল আলম, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আবু, শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, চিত্রনায়ক ফারুক প্রমুখ।
×