ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবকাঠামোর অপ্রতুলতা

ভারত-বাংলাদেশ স্থায়ী নৌ ট্রানজিট উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ জুন ২০১৬

ভারত-বাংলাদেশ স্থায়ী নৌ ট্রানজিট উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ অবকাঠামোর অপ্রতুলতার মধ্যেই ভারত-বাংলাদেশ স্থায়ী নৌ ট্রানজিট উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে কলকাতা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা একটি জাহাজের পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে নৌ ট্রানজিট উদ্বোধন করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। নৌপথ ব্যবহার করে ভারত নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসুল দিয়ে এক অংশ থেকে অন্য অংশে পণ্য নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ভারত নৌপথ ব্যবহার করে পণ্য বাংলাদেশের নৌবন্দরে খালাস করে স্থলপথেও তার অন্য অংশে নিতে পারবে। এর আগে কোন কোন ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে নৌ ট্রানজিট দেয়া হলেও এবার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্য নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিএনপি বিশ্বের ঘৃণিত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ক্ষমতায় যেতে খালেদা জিয়া নবীর দুশমন ইবলিশের সঙ্গেও হাত মেলাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন তিনি নাকি খুনের রাজনীতি বিশ্বান করেন না, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। বিএনপি-জামায়াত দেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। আর খালেদা জিয়া এসব হত্যাকা-ের দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। তাই আমাদের সবার সাবধান থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোন দেশের লেজুরবৃত্তি করে না। আমরাও ভারতেরও লেজুড়বৃত্তি করি না, যারা এসব কথা বলে তারা বিভিন্ন সময় ভারতের লেজুড়বৃত্তি করেছে। পরে নৌবন্দরের ফেরিঘাটে অতিথিবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ফিতা কেটে ট্রানশিপমেন্ট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, এন বি আরের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব আশোক মাধব রায়। তবে দেশের সড়ক এবং নদীবন্দরের কোন রকম উন্নয়ন ছাড়াই ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ নৌবন্দর উন্নয়নে ভারত ঋণ দিতে চাইলেও ওই অর্থ এখনও ছাড় করা হয়নি। আশুগঞ্জ থেকে পণ্য খালাসের পর সড়কপথে ট্রাকে ৫১ কিলোমিটার দূরত্বের ত্রিপুরার আগরতলা সীমান্তে পৌঁছে দেয়া হবে। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহার করা হবে। তবে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহনে দেশের সড়কগুলো ব্যবহার হলে এর আয়ুষ্কাল কমে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে নৌপ্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বছরের শেষ দিকে দিল্লীতে দুই দেশের নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ট্রানজিট মাসুল ঠিক করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ভারত বঙ্গোপসাগরের সোজা নৌপথটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এর আগে অস্বাভাবিক রকম লম্বা নৌপথ পাড়ি দিয়ে ভারত এক অংশ থেকে অন্য অংশে পণ্য পরিবহন করে আসছিল। ভারতের পূর্ব উপকূলের বন্দরগুলো থেকে মালবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর হয়ে পড়ত ভারত মহাসাগরে। এরপর সিঙ্গাপুর বা কলম্বো সমুদ্রবন্দরে সেই পণ্য খালাস হতো। সেই পণ্য আবার বাংলাদেশের জাহাজে বোঝাই হয়ে পৌঁছত সে দেশের বন্দরে। এর ফলে ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে পণ্য পৌঁছতে লেগে যেত দিনের পর দিন। এই বিপুল সময় নষ্টের ফলে বাণিজ্য তো মার খেতই, পরিবহনের খরচও বেড়ে যেত অনেকগুণ। শুল্ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও সড়ক বিভাগকে প্রতিটনে মোট ১৯২ টাকা ২২ পয়সা মাসুল দিতে হবে। এর মধ্যে ১৩০ টাকা পাবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সড়ক বিভাগকে প্রতিটনে ৫২ টাকা, আর ১০ টাকা পাবে বিআইডব্লিউটিএ। এর বাইরে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান যদি পণ্যের নিরাপত্তা চায়, তবে প্রতিটনে আরও ৫০ টাকা ‘এসকর্ট’ ফি গুনতে হবে। এ ছাড়া পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে নৌ প্রটোকলের আওতায় অন্য যেসব চার্জ আছে যেমন বার্থিং, লেবার হ্যান্ডলিং, ল্যান্ডিং, পাইলটেজ এবং কনজারভেন্সি চার্জ দিতে হবে। সব চার্জ আদায় করা হলে বাড়তি আরও দেড়শ’ টাকার মতো আদায় করা সম্ভব হবে। তবে দেশের বন্দরের অবকঠামো উন্নয়ন এবং সড়কের মান নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা। আশুগঞ্জ বন্দর উন্নয়নের জন্য ভারত ঋণ দিচ্ছে। তবে সেই ঋণের টাকা ছাড় না হওয়ায় উন্নয়নের কাজ শুরু হয়নি। অন্যদিকে সড়কের ওপর চাপ বাড়লে এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এর আগে বুধবার বিকেলে ট্রানশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ভারতীয় ১ হাজার ৪ মেট্রিক টন লৌহজাত পণ্যবাহী এমভি নিউটেক-৬ জাহাজটি আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নোঙর করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে খোলা ট্রাকে করে ট্রানশিপমেন্টের এ পণ্য পরিবহন শুরু হবে। ভারতীয় পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান আনবিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। এর আগে বিশেষ মানবিক দিক বিবেচনা করে ট্রানজিট সুবিধার মাধ্যমে বিনামাসুলে দু’দফায় আশুগঞ্জ নৌববন্দর ব্যবহার করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন করা হয়।
×