ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশে তেরো লাখেরও বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৭ জুন ২০১৬

একাদশে তেরো লাখেরও বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ শ্রেণীতে ১৩ লাখেরও বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলন করে জানালেন, কোন শিক্ষার্থী কোন কোন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হলো। কে কোন কোন কলেজে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে। এবার বড় ধরনের কোন বিড়ম্বনা ছাড়াই আবেদনকারীদের এ ফল প্রকাশ হওয়ায় কলেজে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কিছুটা অবসান হলো। এদিকে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ভর্তি। চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। অপেক্ষমাণদের মেধাতালিকা প্রকাশ হবে ২৪ জুন। পর দিন ২৫ থেকে ২৭ জুন ওই মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তরা ভর্তি হতে পারবে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় সচিবালয়ে অনলাইনে ঢাকা বোর্ডের এক শিক্ষার্থীর ফল দেখে এ মেধাতালিকা প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এ এস মাহমুদ, শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ভর্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকারী-বেসরকারী কলেজগুলোতে একাদশে ভর্তিতে এবার ২১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ আসন রয়েছে। ফলে সাত লাখ আসন এবার ফাঁকা থাকবে। সবাই তার পছন্দের কলেজ স্বাভাবিকভাবেই নাও পেতে পারে। তবে আসনের জন্য কেউ ভর্তি হতে পারবে নাÑ এমন হবে না। এবার একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। অনেকেই একাধিক কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। তাই অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদেরও চিন্তার কিছু নেই। প্রথম পর্বের ভর্তির পর স্বাভাবিকভাবেই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীরা চলে আসবে মেধা তালিকায়। শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির পরেও পছন্দের কোন কলেজে আসন ফাঁকা পেলে সেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে। ফলে ভয়ের কিছু নেই। এবার কারিগরি বোর্ডে ৩৬, মাদ্রাসা বোর্ডে ১০টি এবং ঢাকা ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে একটি করে কলেজসহ মোট ৪৮টি কলেজে ভর্তির জন্য কোন আবেদনই পড়েনি বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষার্থীরা নিজের রোল, শিক্ষা বোর্ড, পাসের সাল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইট () থেকে মেধাতালিকা দেখতে পারছে। দেখতে পারছে অপেক্ষমাণ তালিকাও। আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা যে মোবাইল নম্বর দিয়েছে, সেখানেও এসএমএস করে ফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে, সেখানে নোটিস বোর্ডেও মেধাতালিকা ও অপেক্ষমাণ তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভর্তির আবেদনের সময় দেয়া মোবাইল নম্বরে খুুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। খুদে বার্তায় একটি গোপনীয় পিন নম্বর প্রদান করা হয়। এই পিন নম্বরটি ভর্তি নিশ্চয়নের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ জন পাস করে। এর মধ্যে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন কলেজে ভর্তি হতে আবেদন করে। এই হিসাবে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এক লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৬ জন এবার কলেজ ভর্তির আবেদন করেনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। অনেক মেয়ে আছে যাদের বিয়ে হয়ে যায়। ফলে সব সময় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে না। তবে এ সংখ্যা এখন অনেক কম। কারণ দেখা গেছে, এবার কারিগরিতেই পড়ার জন্য প্রায় এক লাখ আবেদন পড়েছে। আশা করছি মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সবাই আবেদন করেছে। অনলাইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দশ এবং এসএমএসের মাধ্যমে আরও দশটিসহ মোট ২০ কলেজে আবেদনের সুযোগ ছিল এবার। একজন আবেদনকারী যতগুলো কলেজকে তার পছন্দক্রমে রাখছে, সার্ভারে ততটি আবেদন হিসাব করা হয়েছে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন গ্রহণের প্রথম দিন ২৬ মে কয়েক ঘণ্টা টেলিটকের মাধ্যমে এসএমএসে ফি জমা দিতে বিড়ম্বনায় পড়েছিল শিক্ষার্থীরা। অবশ্য পরে আর জটিলতার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। গত বছর আবেদন জমা দিতে কোন সমস্যা না হলেও মেধাতালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে সার্ভারে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এতে নির্ধারিত সময়ের তিন দিন পর শিক্ষার্থীরা ওই তালিকা দেখার সুযোগ পায়। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হবে আগামী ১০ জুলাই। বিলম্ব ফি দিয়ে আগামী ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করানো হলেও এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনলাইনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন নিয়ে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করানো হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভর্তি প্রক্রিয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে সহায়তা করছে। এদিকে অনেক মেধাবী বিশেষত জিপিএ-৫ পেয়েও অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে। এ নিয়ে ফল প্রকাশের পর থেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড বলছে, চিন্তার কিছু নেই। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাফুস সালেহীন জানান, এবার একেকজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। অনেকেই একাধিক কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। তাই অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদেরও চিন্তার কিছু নেই। প্রথম পর্বের ভর্তির পর স্বাভাবিকভাবেই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীরা চলে আসবে মেধা তালিকায়। অনেকেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মনোনীত হয়েছে। কিন্তু একটিতে ভর্তি হয়েই তারা বাকি প্রতিষ্ঠানের আসন ছেড়ে দেবে। ফলে অনেক আসন খালি হয়ে যাবে। অপেক্ষমাণদের মেধাতালিকা প্রকাশ হবে ২৪ জুন। পরদিন ২৫ থেকে ২৭ জুন ওই মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তরা ভর্তি হতে পারবে। কলেজ পরিদর্শক বলেন, এবার দুই মাধ্যমে আবেদন করেছে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন মাধ্যমিক পাস করা কলেজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আবেদন জমা পড়েছে ৪৪ লাখ ৯২ হাজার। আবেদনকারীদের মধ্যে নয় লাখ ৩৭ হাজার অনলাইনে ও বাকিরা আবেদন করেছে এসএসএসে। বরিশালে ৬৫ হাজার ১০২, চট্টগ্রামে এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০, কুমিল্লায় এক লাখ ২৬ হাজার ৩৫৯, ঢাকায় চার লাখ ৯ হাজার ৬৭৫, দিনাজপুরে এক লাখ ৩২ হাজার ৪৬৮, যশোরে এক লাখ ২৬ হাজার ৭৪৯, সিলেটে ৭৩ হাজার ৭১, মাদ্রাসা বোর্ডে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ এবং কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ১০ হাজার ৮০৭ জন আবেদন করেছে। উল্লেখ্য, গত ১১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী।
×