ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী আয়ের ৭৫ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে বাড়িঘর নির্মাণে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৭ জুন ২০১৬

প্রবাসী আয়ের ৭৫ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে বাড়িঘর নির্মাণে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে মোট রেমিটেন্সের ২২ দশমিক ১০ শতাংশ আসছে অবৈধ পথে। আর আনুষ্ঠানিক খাতে আসছে ৭৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রবাস আয় বিনিয়োগসংক্রান্ত এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। জরিপে বলা হয়, অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান ও বিনিয়োগ বাড়ছে। এই অর্থের ২৫ শতাংশই সরাসরি ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে ঘরবাড়ি নির্মাণে। এ খাতে প্রবাসী আয়ের শতকরা ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয়। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ উপলক্ষে দুপুরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রকাশিত ‘প্রবাস আয়ের বিনিয়োগসংক্রান্ত জরিপ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কেএম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্যে রাখেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক আব্দুল ওয়াজেদ এবং প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, প্রবাসী আয়ের ৬ শতাংশ পুকুর, খাল খনন, নালা তৈরি বা সেচের জন্য নালা তৈরিতে বিনিয়োগ হচ্ছে। শিল্প স্থাপন, ব্যবসা এবং দোকান স্থাপনে ব্যয় হয় ৫ শতাংশ। কম্পিউটারের সফটওয়্যার কিংবা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এই জরিপ চালিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রেমিটেন্সের এক-চতুর্থাংশ অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্রবাসীরা। শতকরা হিসেবে এর পরিমাণ ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৫ সালে প্রবাস আয়ের গড় পরিমাণ (প্রবাসী মাথাপিছু) ছিল ৩ লাখ ২ হাজার ১৮৩ টাকা। যার মধ্যে নগদে গ্রহণ করা হয়েছে গড়ে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং দ্রব্যমূল্য হিসেবে গড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। এই প্রবাস আয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে ঢাকায়। এই বিভাগে প্রবাস আয়ের গড় ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ টাকা। এর পরে রয়েছে সিলেটের অবস্থান। এ বিভাগে প্রবাস আয়ের গড় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১২৫ টাকা। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন গড় প্রবাস আয় খুলনা বিভাগে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রবাস আয়ের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগে ব্যয় হচ্ছে। এই পরিমাণ আরও বাড়লে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার আরও উন্নতি হতো। তিনি আরও বলেন, শীঘ্রই সৌদি আরবের শ্রম বাজার খুলছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘রেমিটেন্সের বিনিয়োগ যাতে মূল ধারায় হয় সেজন্য আমরা প্রকল্প হাতে নেয়ার চিন্তা করছি। সারাদেশে একবারে করা না হলেও ক্লাস্টারভিত্তিক প্রকল্প নেয়া হবে। যাতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ আরও বাড়াতে পারেন।’ অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বিনিয়োগ করছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ জরিপের প্রাপ্ত ফল হতে দেখা যায়, বিদেশ থেকে প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে ব্যাংক সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত মাধ্যম। প্রায় অর্ধেক প্রবাসী প্রবাস আয় প্রেরণের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংকের সাহায্যে গ্রহণ করেন। এর পরের অবস্থানেই আছে মোবাইল ব্যাংকিং/বিকাশ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানিগ্রাম ইত্যাদি। সকল প্রবাস আয়ের মধ্যে ৯৬ শতাংশ নগদ হিসেবে এবং অবশিষ্ট ৪ শতাংশ দ্রব্যমূল্য হিসেবে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। ফলাফল হতে আরও দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক (৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ) প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবার ২০১৫ সালে গ্রহণ করা প্রবাস আয় হতে বিনিয়োগ করেছ। সকল বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগের সর্বোচ্চ (৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ) পরিবার এ বিনিয়োগ করেছে। যার পরের অবস্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ (৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন বিনিয়োগ (৩৮ দশমিক ২০ শতাংশ) রাজশাহী বিভাগে। ২০১৫ সালে গৃহীত প্রবাস আয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে গড়ে ৭৬ হাজার ৫৪৬ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিভাগসমূহের মধ্যে এই পরিমাণে বিস্তর তারতম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রবাস আয় থেকে গড় বিনিয়োগের পরিমাণ ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (৯৮ হাজার ৪৬৯ টাকা), যার পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল (৭৫ হাজার ৭১৩ টাকা), সিলেট (৭৫ হাজার ২৮৮ টাকা) এবং চট্টগ্রাম (৭৪ হাজার ৪০১ টাকা)। ২০১৫ সালে গৃহীত মোট প্রবাস আয়ের ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ জাতীয়ভাবে প্রবাস আয় গ্রহণকারী পরিবার কর্তৃক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের হার ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ (২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে বরিশাল (২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ), খুলনা (২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ), চট্টগ্রাম (২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ), সিলেট (২২ দশমিক ৬০ শতাংশ), রাজশাহী (২২ দশমিক ৪১ শতাংশ) এবং সর্বনিম্ন (১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ) রংপুর বিভাগে।
×