ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চেন্ট ব্যাংকের মূলধনী লোকসান ৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ জুন ২০১৬

মার্চেন্ট ব্যাংকের মূলধনী লোকসান ৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে সুদসহ মার্জিন ঋণ পাবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এসব মার্চেন্ট ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের হিসাবে মূলধনী লোকসান প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর। দেশের পুঁজিবাজারে ৫৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব মার্চেন্ট ব্যাংকের বাইরে ৯৭ ব্রোকারেজ হাউস থেকে আরও ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মার্জিন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের মার্জিন ঋণ হিসেবে মূলধনী লোকসান বিবেচনায় নিলে বিনিয়োগকারীদের লোকসান ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। মূলধনী লোকসান হলো মার্জিন ঋণে কেনা একটি বিও হিসাবের সব শেয়ারের বাজারদর এমন পর্যায়ে কমে যাওয়া, যেখানে সব শেয়ার বিক্রি করলে বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অংশ হারাবেন পাশাপাশি ঋণের অর্থও খোয়া যাবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, মূলধনের সিংহভাগ মার্জিন ঋণে আটকে যাওয়ায় তারা নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করতে পারছে না। বিনিয়োগে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সক্রিয় হতে না পারায় বাজারে শেয়ার ক্রয়ে চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে না। এতে বাজার স্বাভাবিক গতিও ফিরে পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারদরে ধস নামার পর গত সাড়ে ৫ বছরের দরপতনে মার্জিন ঋণ নেয়া বিনিয়োগকারীদের অনেকে তাদের নিজস্ব বিনিয়োগের পুরোটাই খুইয়েছেন। আর মার্জিন ঋণ দিয়ে শীর্ষ ১০ মার্চেন্ট ব্যাংক ওইসব ঋণের ৭ থেকে ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত হারিয়েছে। আরও অন্তত ১২টির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক হিসেবে মূলধনী লোকসান রয়েছে। যেসব মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকদের মূলধনী লোকসান সবচেয়ে বেশি সেগুলোর শীর্ষে রয়েছে প্রাইম ফিন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছে সুদসহ পাবে প্রায় ৩৬১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গ্রাহকদের মূলধনী লোকসান ৭৯ শতাংশ। বর্তমান বাজারদরে এই মার্চেন্ট ব্যাংকটির লোকসান প্রায় ২৮৭ কোটি টাকা। লোকসানে থাকা অপর মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে জিএসপি ফিন্যান্স (৬০ শতাংশ), এক্সিম ইসলামী ইনভেস্টমেন্ট (৫৮ শতাংশ), আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল (৪৮ শতাংশ), এফএএস ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (৪৬ শতাংশ), অগ্রণী ইক্যুয়িটি ইনভেস্টমেন্ট (৪০ শতাংশ), সোনালী ইনভেস্টমেন্ট (২৫ শতাংশ), সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস (২৩ শতাংশ), ইউনি ক্যাপিটাল (২২ শতাংশ) এবং যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট (৭ শতাংশ)। এর বাইরে সার্বিকভাবে অন্য মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মার্জিন ঋণ নেয়া গ্রাহকদের এখনও কিছুটা মূলধন রয়েছে। এরমধ্যে এবি ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংকের ৬৯৬ কোটি টাকার মার্জিন ঋণের বিপরীতে গ্রাহকদের নিজস্ব মূলধন মাত্র ৬ শতাংশ আছে। ইসি সিকিউরিটিজেন গ্রাহকদের মূলধন রয়েছে নিজস্ব বিনিয়োগের মাত্র ১৪ শতাংশ। এছাড়া এসবিএল ক্যাপিটালের ১৭ শতাংশ, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের সাড়ে ১৭ শতাংশ, বিএলআই ক্যাপিটালের সাড়ে ২৩ শতাংশ, আইসিবি ক্যাপিটালের ২৮ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের ২৮ শতাংশ, বেনকো ফিন্যান্সের ৩১ শতাংশ, ব্র্যাক ইপিএলের ৩১ শতাংশ, বিএমএসএলের ৩৪ শতাংশ, জনতা ক্যাপিটালের ৩৬ শতাংশ এবং উত্তরা ফিন্যান্সের ৪৬ শতাংশ অর্থ গ্রাহকদের মূলধন হিসেবে এখনও আছে।
×