ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৭ জুন ২০১৬

বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্প

রাজধানীর প্রাণপ্রবাহ বুড়িগঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি মঙ্গলবার এক হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী বংশাই-তুরাগ নদ পুনর্খনন করা হবে। যাতে বুড়িগঙ্গাসহ মহানগরীর চারপাশে বহমান নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বজায় থাকে সারা বছর। যাতে নৌ চলাচল ব্যাহত না হয়। ২০১০ সালে গৃহীত এই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিসহ সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, রাজধানী হিসেবে ঢাকার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোন মূল্যে, যে কোন উপায়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে বুড়িগঙ্গাকে। ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায়। একেই তো শীর্ণ তনু, ততোধিক ক্ষীণ প্রবাহ, বিবর্ণ কালো বর্ণের পঙ্কিল পানি, ভাসমান ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ, অবরুদ্ধপ্রায়। প্রকৃতপক্ষে যা একটি বড়সড় নর্দমা বলেই প্রতিভাত হয়। সেই প্রায় প্রাণহীন স্তব্ধপ্রায় দুর্গন্ধকবলিত বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে কোন স্বপ্ন দেখা দুঃস্বপ্নের নামান্তর বৈকি। তবু বাস্তবতা হলো, মানুষ স্বপ্ন দেখে নিরন্তর। এরই আরও একটি নমুনা বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে বিকল্প একটি হাতিরঝিল নির্মাণের স্বপ্ন। ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নেয়া হয়েছে এই প্রকল্প। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করবে বিশ্বব্যাংক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে শিকদার মেডিক্যাল থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের আধুনিকায়ন, দু’পাশে সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে, পর্যটকদের জন্য বিনোদন সুবিধা সংবলিত বিলাসবহুল প্রমোদতরী, বিনোদন পার্ক, অবকাশ যাপনের জন্য আলিশান রিসোর্ট, হোটেল-রেস্তরাঁ সর্বোপরি সর্বাধুনিক নৌবন্দর ও টার্মিনাল। উপরোক্ত দুটো প্রকল্প ও পরিকল্পনা যে খুব অভিনব, আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক, এ কথা বলতে হবে এক বাক্যে। তবে এর জন্য সর্বাগ্রে যা করণীয় তা হলো একদার কল্লোলিনী স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার পরিপূর্ণ পুনরুদ্ধার। কেননা, ভূমিগ্রাসীদের অবৈধ হিংস্র থাবায় ইতোমধ্যেই বুড়িগঙ্গার দুই তীরের অধিকাংশ জমি চলে গেছে বেদখলে। সে সব স্থানে গড়ে উঠেছে বড় বড় অসংখ্য স্থাপনা ও বহুতল ইমারত। সময় সময় সে সবের কিয়দংশ লোক-দেখানোভাবে উচ্ছেদ করা হলেও অচিরেই তা চলে যায় দখলদারদের কবলে। কোন কোন স্থাপনা উচ্ছেদ স্পর্শকাতরও বটে। সেক্ষেত্রে দু’পাশের অবৈধ স্থ্পানাগুলো উচ্ছেদ করা না গেলে নদীর প্রবাহ অক্ষুণœ রাখা সম্ভব হবে না কিছুতেই। বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করাও জরুরী ও অপরিহার্য। হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প নিঃসৃত যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য এককভাবে বুড়িগঙ্গার ৩০ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী। এই বর্জ্য আবার নানা রাসায়নিকে রঞ্জিত ও বিষাক্ত। এর বাইরেও রয়েছে দু’পাশের যাবতীয় নালা-নর্দমা-স্যুয়ারেজ লাইন। নানা শিল্প-কারখানার বর্র্জ্য। সর্বোপরি পরিত্যক্ত পচনশীল ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের কথা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। উচ্চ আদালতের নির্দেশও আছে। কাজ হচ্ছে না। বুড়িগঙ্গায় যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষেপ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা না গেলে নদী পুনরুদ্ধার অধরাই থেকে যাবে। বুড়িগঙ্গাকে সর্বাগ্রে পুনরুদ্ধার করতে হবে, নাব্য পূর্বাবস্থাসহ। এর পরই না হয় অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ, সবুজায়ন, পার্ক ও বিনোদন ব্যবস্থা, থ্রিস্টার-ফাইভস্টার হোটেল! তা না হলে ‘পরি’ ‘কল্পনা’ হয়ে অচিরেই উড়ে যাবে আকাশে! প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা যাবে পানিতে।
×