ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেতে মরিয়া পত্রলেখা

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১৬ জুন ২০১৬

বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেতে মরিয়া পত্রলেখা

অনন্য রেজা করিম সিটি লাইটস ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২ বছর আগে, ২০১৪ সালে। জীবিকার সন্ধানে মুম্বাই শহরে আসা গ্রামের এক সাধারণ মানুষের জীবনযুদ্ধের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের গল্প নিয়ে আবর্তিত ছবিটিতে এক আটপৌরে সহজসরল গ্রাম্য তরুণী গৃহবধূর চরিত্রে রূপদান করেছিলেন পত্রলেখা। ‘সিটিলাইটস’ ছবির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল তার। জোরালো সামাজিক বক্তব্য আর চমৎকার অভিনয়গুণে ছবিটি দর্শক সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল। প্রথম অভিনীত ছবিতেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন পত্রলেখা। ৫ বছর বয়সী কিশোরী কন্যার মায়ের ভূমিকায় নিজেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করেছিলেন এই তন্বী অভিনেত্রী। নিজের অভিনয় নিয়ে অনেকটাই আস্থাশীল এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তার ধারণা ছিল, ‘সিটিলাইটস’-এর পর মোটামুটি ভাল অফার পাবেন বলিউডে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, পত্রলেখার কাছে তেমন কোন ভাল অফার আসেনি। ‘কয়েকটি সিনেমায় আমাকে ‘সিটিলাইটস’-এর মতো মায়ের ভূমিকায় অভিনয়ের অফার দেয়া হয়েছিল, যা আমার একদম পছন্দ হয়নি, ফলে আমাকে অনেকটা সময় ধরে একদম বেকার বসে থাকতে হয়েছিল। এ রকম অবস্থা হবে আমি ভাবিনি, বলেন তিনি। সেই অস্বস্তিকর সময়গুলোতে ভাল কোন অফারের অপেক্ষায় ছিলেন পত্রলেখা। ‘লাভ গেমস’ ছবিটি তার সেই প্রত্যাশা এবং অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। অল্প কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে ‘ইরোটিক থ্রিলার’ ধাঁচের ছবিটি। যেখানে উচ্চাকাক্সক্ষী সুন্দরী আবেদনময়ী হাইসোসাইটি গার্লের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পত্রলেখা। এখানে তার অভিনীত চরিত্রটির নাম র‌্যামোনা, নিজের উচ্চাভিলাস পূরণের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে মোটেও পিছপা হয়নি সে। এজন্য নৈতিকতার ধার ধারে না র‌্যামোনা। যে কোন পুরুষের সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না, তার কাছে প্রেম ভালবাসা স্রেফ একটা খেলার মতো। তেমনি এক সাহসী, ডেমকেয়ার নারীর চরিত্রে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন পত্রলেখা ‘লাভ গেমস’ ছবিতে। মেঘালয়ের শিলংয়ে জন্ম হলেও পত্রলেখা বড় হয়েছেন বাঙালোর এবং মুম্বাই শহরে। মুম্বাই শহরের জীবনযাপন সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। এখানে নর-নারীর সম্পর্কের বিচিত্র রূপ দেখেছেন, যার আলোকে ‘লাভ গেমস’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র র‌্যামোনার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এ প্রসঙ্গে পত্রলেখা বলেন, ‘র‌্যামেনা এ যুগের ডেমকেয়ার মেয়ে, লোকনিন্দার ভয় করে না সে। নিজে যা করতে মন চায় তাই করে, বহুগামী সম্পর্ক নিয়ে তার কোন মাথা-ব্যথা নেই। আমি বাস্তবে এ রকম অনেক নারী দেখেছি, তাদের উদ্দাম জীবনযাপন নিয়ে আমি কোন সমালোচনা কিংবা মন্তব্য করব না, তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা ঠিক তার উল্টো। বহুগামী সম্পর্কে আমার আস্থা নেই, আমি পছন্দও করি না তা।’ ২৬-এ পা রাখা পত্রলেখার বাবা একজন চার্টার্ড এ্যাকাউন্টন্টে। বাবা চেয়েছিলেন মেয়েও তার পথ ধরে চলবে। একজন সিএ হবে কিন্তু পত্রলেখার আগ্রহ ছিল অভিনয় এবং নাচে। কাস্টিং ডিরেক্টর বন্ধুর সহযোগিতায় হানশল মেহতার বহুল প্রশংসিত ‘সিটিলাইটস’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল। বাফটা এ্যাওয়ার্ড জয়ী ব্রিটিশ সিমেনা ‘মেট্রো ম্যানিলা’র হিন্দি রিমেক সিটি লাইটস’ ছবির নির্মাণের নেপথ্যে ছিলেন বলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মহেশ ভাট। তাঁর বিভিন্ন উপদেশ পরামর্শ মেনে চলছেন পত্রলেখা। ‘লাভ গেমস’ ছবিতে নিজেকে অত্যন্ত সাহসিভাবে উপস্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ছবির কাজ শুরুর আগে আমি অনেক ভয়ের মধ্যে ছিলাম, ছবির চিত্রনাট্য পড়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত পারব কিনা শঙ্কা ছিল মনে। এক্ষেত্রে ছবির পরিচালক বিক্রম ভাট আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। যখন কাজ শুরু করলাম আমার সব ভয় দূর হয়ে গেল। ‘সিটিলাইটস’ ছবিতে আমাকে যে ধরনের সাধারণ সহজ সরল গ্রাম্য তরুণী গৃহবধূর চরিত্রে দেখা গেছে ‘লাভ গেমস’ এর র‌্যামোনা চরিত্রটি তার ঠিক বিপরীত। আমি বলব, এটি আমার জন্য আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জ এবং এক্সপেরিমেন্ট ছিল। আমার জন্য আগামীতে আরও ভিন্ন ধরনের কোন চরিত্র আসবে যা রূপায়নে আমার মধ্যে আর দ্বিধা সঙ্কোচ কিংবা ভয় থাকবে না।’ দুঃসাহসী শব্দটার ঘোর বিরোধী পত্রলেখা আরও বলেন, ‘মিডিয়াতে আমাকে দুঃসাহসী অভিনেত্রী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এখানে দুঃসাহসের কি আছে, ‘লাভ গেমস’ ছবিতে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, আমাদের চারপাশেই এ রকম অনেক ঘটনাই ঘটছে। এ নিয়ে হৈচৈ করার কিছু নেই।’ নিজেকে কোনভাবেই ইরোটিক থ্রিলার সিনেমার নায়িকা হিসেবে পরিচিত এবং ব্যস্ত করার পক্ষপাতি নন পত্রলেখা। ‘সিটিলাইটস’ ছবিতে অভিনয়ের পর আমার পরবর্তী লক্ষ্য ছিল একজন ভিন্ন ধরনের অভিনেত্রীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ‘লাভ, গেমস’ আমার তেমনি একটি প্রচেষ্টা এরপর হয়ত ব্যতিক্রমধর্মী অন্য কোন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করব, তিনি বলেন। পত্রলেখা স্রেফ অভিনয়েই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তিনি প্রশিক্ষণ লাভ করা একজন ভাল ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পীও বটে। সব ধরনের খেলাধুলা, সাঁতার, ঘোড়ায় চড়ায় অভ্যস্তও তিনি। দেশী-বিদেশী আঞ্চলিক সব ধরনের সিনেমা নিয়মিত দেখেন। পত্রলেখা নামটি তার দাদির দেয়া, তার পোশাকি নাম অন্বিতা পাল। সিনেমায় অভিনয় করতে এলে পরিচালক, প্রযোজক, মহেশভাট তার পত্রলেখা নামটি দারুণ পছন্দ করেন এবং এ নামেই বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন। অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে পত্রলেখার গভীর সম্পর্ক অনেক দিন থেকেই, এ সম্পর্কে তারা অনেকবারই কথা বলেছেন। তবে আপাতত বিয়েশাদির কথা ভাবতে চান না। পত্রলেখার এখন মনোযোগ বলিউডে নিজেকে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এ জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
×