ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৬ জুন ২০১৬

বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট শুরু আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মাশুলের বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট সুবিধা আজ বৃহস্পতিবার থেকে চালু হচ্ছে। এ ট্রানজিট সুবিধার আওতায় মাসুল দিয়ে প্রথম ভারতীয় পণ্য পরিবহন আজ শুরু হবে। নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী প্রথমবারের মতো ট্রানজিটের পণ্য যাবে ভারতে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আশুগঞ্জ বন্দর পরিদর্শক জানান, এ লক্ষ্যে বেসরকারি একটি জাহাজ এক হাজার টন ভারতীয় স্টিল সিট নিয়ে ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে কাছে পৌঁছেছে। নৌবন্দর থেকে সড়কপথে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় যাবে সিটগুলো। পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাসুল আদায় করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে সংশোধিত প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম মাসুলসহ পণ্য পরিবহন করতে যাচ্ছে ভারত। আর এই চুক্তির আওতায় প্রথম চালানটি ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে পৌঁছেছে। এক হাজার মেট্রিক টন স্টিল সিট নিয়ে জাহাজটি এখন খালাসের অপেক্ষায় আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার ৪ মেট্রিকটন এসএস রড নিয়ে এমভি নিউটেক-৬ জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে নোঙ্গর করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে দু-দেশের মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ট্রানজিট কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের মধ্যে এটিই হবে প্রথম মাসুল নিয়ে ট্রানজিট। আর নৌ ট্রানজিট কার্যকরের ফলে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক পাবে নতুন মাত্রা। ফলে বাড়বে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় এসব পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাসুল আদায় করা হবে। এছাড়া ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলট ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং ফি, চ্যানেল চার্জ ও লেবার হোলিং চার্জ সহ জাহাজটি থেকে বাংলাদেশ পাবে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৫ টাকা। উল্লেখ্য, এর আগে বিশেষ মানবিক কারণে তিন দফায় ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ফি ছাড়াই আশুগঞ্জ নৌবন্দর ও আশুগঞ্জ-আখাউড়া প্রায় ৪৫ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করে বিদ্যুত কেন্দ্রের ভারি মালামাল এবং খাদ্যশস্য ট্রানজিট করেছিল ভারত। এবার মাশুলের আওতায় প্রথমবারের মতো পণ্য পরিবহন শুরু করল দেশটি। স্থানীয় ট্রাক চালক ও বন্দরের শ্রমিকরা জানান, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে তারা কাজ করতে আগ্রহী। ভারতীয় এই মালামাল পরিবহন ও স্থানান্তরে আশুগঞ্জ বন্দরের শ্রমিক ও ট্রাক ব্যবহার করা হোক। নিজ এলাকায় এই পণ্য পরিবহন ও স্থানান্তরে কাজ করতে চান তারা। অন্যথায় যে কোন ধরনের আন্দোলনে যাবেন বলেও জানান তারা। এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। আশুগঞ্জ ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইদন মিয়া মিন্টু বলেন, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে স্থানীয় ট্রাক আর শ্রমিকদের দিয়ে করানো হোক। এখানে প্রায় আড়াই শতাধিক ট্রাক আছে যা দিয়ে অনায়াসে ভারতীয় মালামাল পরিবহন সম্ভব। তবে আশুগঞ্জ-আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তার অনেক অংশেই ভাঙা রয়েছে। এই সড়কটি ব্যবহার করে ভারি মালামাল পরিবহন করা হলে সড়কের অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে ক্ষেত্রে এই রাস্তাটির মেরামত করাও জরুরী। মাসুল সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিএ আশুগঞ্জ বন্দরের পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম বলেন, পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাসুল আদায় করা হবে। এছাড়া ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলট ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং ফি, চ্যানেল চার্জ ও লেবার হোলিং চার্জসহ জাহাজটি থেকে বাংলাদেশ পাবে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৫ টাকা। ট্রানজিট চালু উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আশুগঞ্জ নৌবন্দরের ওয়্যার হাউজে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই মাসুলসহ প্রথম পণ্য পরিবহন শুরু হবে। অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান প্রধান অতিথি থাকবেন বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব হেদায়েতুল আল মামুন, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর উর্ধতন কর্মকর্তারা।
×