ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিটন-কার্তিকের শতক, সাকিবের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট শিকার

মোহামেডানকে উড়িয়ে দিল আবাহনী

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ১৬ জুন ২০১৬

মোহামেডানকে উড়িয়ে দিল আবাহনী

স্পোর্টস রিপের্টার ॥ আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবাল মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘শিরোপা রেসে থাকতে হলে জিততেই হবে।’ মোহামেডানের বিপক্ষে মর্যাদাপূর্ণ ম্যাচে তাই বলে এত সহজে জিতে যাবে আবাহনী! আবার এত বড় ব্যবধানে! ২৬০ রানের রেকর্ড জয় তুলে নেবে! লিটন কুমার দাসের ১৩৯ রানের পর ভারতের দিনেশ কার্তিকের ১০৯ রান ও সাকিব আল হাসানের ৫৭ রানে যখন স্কোরবোর্ডে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৭১ রান যোগ করে আবাহনী, তখনই আসলে ম্যাচের ফল কী হতে যাচ্ছে, তা বোঝা হয়ে যায়। তাই বলে ব্যবধান এত বড় হয়ে যাবে, এমন ভাবনা কারও মাথায়ই ঢুকেনি। সাকিব (৫/১৮) এতটাই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন যে তার স্পিন ঘূর্ণিতে ২৪.৩ ওভারে ১১১ রান করতেই গুটিয়ে যায় মোহামেডান। মোহামেডানের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন নাঈম ইসলাম (৩২)। এই ম্যাচে নাঈমই ছিলেন আবার অধিনায়ক। মুশফিকুর রহীম নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ? যতদুর জানা গেছে, ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতেই এমনটি করেছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ রান। আবাহনী রেকর্ড গড়েই জিতেছে। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে বাংলাদেশের কোন দলের সবচেয়ে বড় জয় এটি। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে রানের দিক দিয়ে বিশ্বব্যাপী বড় ব্যবধানে জয়ের তালিকায় আবাহনীর এ জয় আছে ৯ নম্বরে। ১৯৯০ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে ডেভনের বিপক্ষে (৬৭/১০) সামারসেট (৪১৩/৪) যে ৩৪৬ রানে জিতেছিল, সেটি ছিল সবচেয়ে বড় জয়। বিশ্ব ক্রিকেটে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ১১টি ম্যাচে ২৫০ রান বা তার বেশি রানের ব্যবধানে জেতার রেকর্ড আছে। এবার বাংলাদেশের ঘরোয়া দল আবাহনীও ২৫০ রানের বেশি ব্যবধানে জেতার রেকর্ড গড়ল। এই জয়ে আবাহনীর পয়েন্ট হয়ে গেল ১৬। আর মোহামেডানের ঝুলিতে ১৪ পয়েন্টই আছে। আরেকটি ম্যাচ হারলে হয়ত শিরোপা স্বপ্নই শেষ হয়ে যাবে মোহামেডানের। শুধু বড় জয়ের রেকর্ডই নয়, ঢাকা লীগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও গড়েছে আবাহনী। এ রেকর্ডগুলো আবার হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের বিপক্ষে। আবাহনী যে রান গড়েছে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে সুপার লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৪ রানে দুই উইকেট হারায় আবাহনী। এরপর লিটনের সঙ্গী হন ভারতের অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক। দু’জনের ১৬২ রানের জুটি বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যায় দলটিকে। লিটনের ১২৫ বলে ১৩৯ রানের ইনিংসটি চোখে লেগে থাকার মতো। আরিফুল হকের বলে বোল্ড হয়ে যখন সাজঘরে ফেরার সময় তার নামের পাশে তখন ১৮টি চার ও একটি ছক্কায় ১৩৯ রান। এবারের প্রিমিয়ার লিগে আবার এটিই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। লিটনের পর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কার্তিক। ৯৭ বলে ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৯ রান করে আরিফুল হককে নিজের উইকেটটি দেন। এর পর সাকিব আল হাসান মাত্র ২২ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন। ২৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। দুটি চারের সঙ্গে পাঁচটি ছক্কা হাঁকান বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। শেষদিকে, মোসাদ্দেক হোসেন ৮ বলে ১৯ ও আবুল হাসান রাজু ৮ বলে ১২ রান যোগ করলে ৩৭১ রানের পুঁজি পায় তামিম ইকবালের আবাহনী। মোহামেডান বোলারদের মধ্যে আরিফুল হক নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেন থিসারা পেরেরা, এনামুল হক (জুনিয়র) ও নাইম ইসলাম। আবাহনীর মতো মোহামেডানের ইনিংসে আসলে বলার মতো তেমন কিছু নেই। এখানেই সেই আবাহনীরই গল্প। মোহামেডানের ইনিংসের গল্পের পুরোটা জুড়েই থাকবেন সাকিব। তার বোলিংয়েই যে মোহামেডানের ইনিংস ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। দ্রুতই গুটিয়ে যায় মোহামেডান। সেই সঙ্গে লীগ পর্বে মোহামেডানের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধও নিয়ে নেয় আবাহনী। এমন মুহূর্তে এসে প্রতিশোধ নেয়, যখন যে দল হারবে, তাদেরই শিরোপা স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মোহামেডানের বোধহয় তাই হলো। মোহামেডানের ইনিংসে শুধু তৃতীয় উইকেটে নাঈম ও মুশফিক মিলে যে ৩৮ রানের জুটি গড়েছেন, সেই সময়ই কিছুটা আশা জাগে। সেই আশাও বেশিক্ষণ জ্বলে থাকেনি। দ্রুতই নিভে গেছে। আর কোন জুটি ২০ রানের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। এমনই দুর্দশা হয় মোহামেডানের। সাকিবের স্পিন জাদুতে শুরুতেই এজাজ আহমেদ, এরপর এক এক করে আরিফুল হক, নাজমুল হোসেন মিলন, হাবিবুর রহমান ও ইমন আহমেদের উইকেট শিকার করেন সাকিব। ৯৫ থেকে ১১১ রান, এই ১৬ রানের মধ্যে যে ৪ উইকেটের পতন ঘটে, সবকটি নেন সাকিব। তবে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি সাকিবের দখলে যায়নি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের সঙ্গে লীগে প্রথম শতক করা লিটন কুমার দাস হয়েছেন ম্যাচের নায়ক। তিনিই যে আবাহনীকে বড় সংগ্রহের পথটা দেখিয়ে দিয়েছেন। তার এমন দুর্দান্ত ইনিংসেই তো পরের ব্যাটসম্যানরা নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। তাতে করে ঢাকা লীগে দলীয় সর্বোচ্চ রান, সবচেয়ে বড় জয় মিলেছে আবাহনীর। মোহামেডানকে এবার একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে আবাহনী। স্কোর ॥ আবাহনী-মোহমেডান ম্যাচ-বিকেএসপি আবাহনী ইনিংস ৩৭১/৫; ৫০ ওভার (তামিম ২২, লিটন ১৩৯, শান্ত ৭, কার্তিক ১০৯, সাকিব ৫৭, সৈকত ১৯*, রাজু ১২*; আরিফুল ২/৫৫)। মোহামেডান ইনিংস ১১১/১০; ২৪.৩ ওভার (সৈকত ৫, এজাজ ৩, নাঈম ৩২, মুশফিক ২৬, পেরেরা ৫, আরিফুল ১৭, ফয়সাল ৩, মিলন ২, হাবিবুর ৪, ইমন ১১, এনামুল জুনিয়র ০*; সাকিব ৫/১৮, সাকলায়েন ২/২৭)। ফল ॥ আবাহনী ২৬০ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ লিটন কুমার দাস (আবাহনী)।
×