ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমেকের মর্গে পড়ে আছে প্রবাসীর লাশ, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দুই ঘাতকের

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৬ জুন ২০১৬

কুমেকের মর্গে পড়ে আছে প্রবাসীর লাশ, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দুই ঘাতকের

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১৫ জুন ॥ কুমিল্লায় স্ত্রীর ভাড়াটে খুনীদের হাতে নিহত সৌদিপ্রবাসী ময়নাল হোসেনের মরদেহের ময়নাতদন্ত বুধবারও করা হয়নি। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে প্রবাসী ময়নালের মরদেহ। দিনভর অপেক্ষার পর বুধবার বিকেলে প্রবাসীর স্বজনদের চিকিৎসকরা জানান বোর্ড গঠন বিলম্ব হওয়ায় বৃহস্পতিবারের আগে ময়নাতদন্ত হচ্ছে না। এর আগে দুপুরের দিকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরীর আদালতে ময়নালের অন্যতম দুই ঘাতক বদি ডাকাত ও বাবু মিয়া হত্যা ও মরদেহ গুমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই মোঃ সহিদুল ইসলাম। প্রবাসীর দুই ঘাতক বদি ডাকাত ও বাবু মিয়ার উপস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে ডিবি পুলিশ মুরাদনগরের জাড্ডা হাহাতি গ্রামের একটি খালের ৫/৬ ফুট গভীর গর্ত থেকে ওই প্রবাসীর মরদেহ উদ্ধার করে। জানা যায়, বুধবার দুুপুরে গ্রেফতারকৃত বদি ও বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে জানায় ‘নিহতের স্ত্রী তাছলিমার সঙ্গে তার স্বামীকে হত্যা করতে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি হয়, গত বছরের ১ নবেম্বর রাতে অগ্রিম ৪০ হাজার টাকা দেয়ার পর তা পাঁচ হাজার টাকা করে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। গভীর রাতে প্রবাসী ময়নালের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ও বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে ঘরের ভেতরই হত্যা করা হয়। এ সময় ঘরের বাইরে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন তাছলিমা আক্তার। হত্যা নিশ্চিত করার পর মরদেহ বাড়ির অদূরে একটি খালে নিয়ে অন্তত ৫/৬ ফুট গভীর গর্ত খনন করে পুঁতে ফেলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, জবানবন্দীতে ওই দুই ঘাতক তাদের আরও ছয় সহযোগীর নাম প্রকাশ করে। যাদের সবাই হত্যা ও লাশ গুমে জড়িত ছিল। তাদের গ্রেফতারে ডিবি পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান। এর আগে এ মামলার প্রধান আসামি নিহতের স্ত্রী তাছলিমা আক্তারকে গত ৮ মার্চ গ্রেফতারের পর সে হত্যা ও মরদেহ গুমের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছিল। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টা ধরে ওই প্রবাসীর মরদেহ কুমেকের মর্গে পড়ে থাকার পরও ময়নাতদন্ত করেনি ফরেনসিক বিভাগ। এ প্রসঙ্গে কুমেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান বহুল আলোচিত ডাঃ কেপি সাহা জানান, ফরেনসিক বিভাগের এক ডাক্তার ছুটিতে থাকায় বোর্ড গঠনে বিলম্ব হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তির ময়নাতদন্ত হবে। তবে কুমেকের অপর একটি সূত্র জানায়, তনু হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম ময়নাতদন্ত এবং ১০ দিন পর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ায় এ ফরেনসিক বিভাগের বিতর্কিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দেশব্যাপী এখন বিতর্ক চলছে। তাই এর সঙ্গে নতুন করে সাড়ে সাত মাস আগের ওই মরদেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে ফরেনসিক বিভাগীয় প্রধান ডাঃ কেপি সাহা আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাই বুধবার দিনভর তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে করণীয় ও মরদেহের বিভিন্ন ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে নিশ্চিত হতেই মরদেহের ময়নাতদন্ত থেকে বিরত ছিলেন। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সহিদুল ইসলাম জানান, মেডিক্যাল বোর্ড গঠনে আদালতের নির্দেশনা গত সোমবারই ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়, মঙ্গলবার মরদেহ উত্তোলনের পর মর্গে লাশ নেয়ার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষার পর চিকিৎসকরা বুধবার ময়নাতদন্তের কথা নিশ্চিত করেন। কিন্তু ফরেনসিক বিভাগ রহস্যজনক কারণে আজও (বুধবার) ময়নাতদন্ত না করে বৃহস্পতিবার করা হবে বলে জানিয়ে দেন।
×