ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানানসই পোশাক তৈরি করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৬ জুন ২০১৬

মানানসই পোশাক তৈরি করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো

রহিম শেখ ॥ পোশাক বিলাসীদের কাছে ফ্যাশন হাউসের চাহিদা বরাবরই বেশি। আর এ চাহিদাকে সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোর কর্মী থেকে শুরু করে তাঁতি, ডিজাইনার, দর্জি, কারিগর, কারুশিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারও দম ফেলার ফুরসত নেই। পছন্দের প্রিয় পোশাকটি কিনতে রাজধানীর প্রায় পাঁচ শতাধিক ফ্যাশন হাউস এবং অর্ধশত শপিংমলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। নতুন ডিজাইনের বাহারি সব পোশাকের চমক আর চোখ ধাঁধানো বৈদ্যুতিক বাতির ঝলক ক্রেতা আকর্ষণ বাড়াচ্ছে ফ্যাশন হাউসগুলোতে। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও বিদেশী পোশাকের কাছে মার খাচ্ছে এসব ফ্যাশন হাউসের পোশাক। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বলছে, দেশী বাজার থেকে কাপড় কিনতে না পারার কারণে বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে কাপড় কিনতে হয়। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। অন্যদিকের প্রচলিত কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশী পোশাকের অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে কম দামে সেগুলো কিনে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে শাহবাগের আজিজ মার্কেট থেকে শুরু করে ধানম-ি, গুলশান-বনানী, উত্তরা, ওয়ারী, মিরপুর রোড, মিরপুর, পল্লবীসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের ফ্যাশন হাউসগুলোতে নতুন নতুন পোশাকে কানায় কানায় পূর্ণ। দেশী কাপড় দিয়ে এদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে রুচিশীল ও মানানসই পোশাক তৈরি করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। কাপড় বোনা, কাটিং শেষে পোশাক তৈরি, ডিজাইন ও হাতের কাজ, ব্লক করা, ওয়াশ, আয়রন থেকে শুরু করে প্রত্যেক পর্বের কারিগরদের এক মিনিটের ফুরসত নেই। থ্রিপিস, পাঞ্জাবির সঙ্গে অনুষঙ্গ লেস, পুঁতি বা পাথরের সমন্বয় করার কাজ নিয়েও ব্যস্ত কারিগররা। কার আগে কে নতুন ডিজাইনের পণ্য আনতে পারবেন এ নিয়ে চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। দেশী এসব ফ্যাশন হাউসে সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর ও মহিলারা। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহারের বাহার রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষের আগ্রহ বাড়ছে দেশী পোশাকের প্রতি। এটা অত্যন্ত ভাল দিক। বেচাকেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও আশানরূপ বিক্রি বাড়েনি। তবে আগামী ১৫ রমজানের পর পুরোদমে বিকিকিনি শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস রঙ-এর কর্ণধার ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, এবার যেহেতু গরমে ঈদ পরছে তাই ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। বেচাকেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও বেচাবিক্রি সেভাবে হয়নি। তবে আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বিক্রি জমে উঠবে। বাংলাদশে ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমতির তথ্য মতে, দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে বছরে আনুমানকি ছয় হাজার কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হয়। সারা বছর তাদের যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকেই হয় রোজার ঈদে। বাকি ১১ মাসে লেনদেন অর্ধেক। জানা যায়, দেশে বড় ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা প্রায় ৫০টি। এর প্রত্যেকটির গড়ে ১০ থেকে ১২টি শোরুম রয়েছে। নামী-দামী ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে রয়েছে অঞ্জনস, রঙ, আড়ং, অন্যমেলা, নিত্য উপহার, কে ক্র্যাফট, বিন্দিয়া, নভীনস, তহুস কালেকশন, চরকা, রেডিয়েন্ট ক্রিয়েশন, নভীনস, বিবিআনা, কুমুদিনি, নাগরদোলা, সাদাকালো, শাহরুখস কালেকশন, বাংলার মেলা, নকশা, ওজি, লুবনান, প্লাস পয়েন্ট, টেক্সমার্ট, ক্যাটস আই, লুবনান, ইয়োলো, দেশাল, দর্জিবাড়ি, স্বদেশী ও দেশীদশ। এসব ব্র্যান্ডের পণ্য নিজস্ব শোরুমেই বিক্রি হয়। এর বাইরে ছোট-বড় আরও সাড়ে ৪০০ ফ্যাশন হাউস রয়েছে ঢাকায়। এগুলোরও গড়ে দুই থেকে পাঁচটি শাখা রয়েছে। ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগঠন বাংলাদশে ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাড়ে চার হাজারের মতো ফ্যাশন হাউস রয়েছে। তবে অনেক ফ্যাশন হাউসের রাজধানীর বাইরে একটি বিক্রয়কেন্দ্রও নেই। অথচ পাকিস্তান, ভারতীয় পোশাকে বাজার সয়লাব। বিভাগীয়, জেলা শহরে তো আছেই, উপজেলা পর্যায়ের দোকানেও পাওয়া যাবে জরি কন্দল বা পুঁতির কাজ করা ভারতীয় পোশাক। আবার জেলা শহরের শপিংমলগুলোতেও দাপটের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানী লন বা ভারতীয় সিরিয়ালের নামের নেটের পোশাক। ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলনে, দেশীয় ফ্যাশন হাউসের তৈরি করা পোশাকের বেশির ভাগই উন্নত মানের কাপড়ে তৈরি হচ্ছে। সুতার মানও ভাল। রঙেও থাকছে স্থায়িত্ব। তারপরও গত কয়কে বছর ধরে ঈদের বাজারের একটি অংশ দখল করে নিচ্ছে ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা নানা ধরনের পোশাক। জানা গেছে, এবারের ঈদ বাজারে বিভিন্ন ফ্যাশনের সালওয়ার-কামিজের সঙ্গে যোগ হয়েছে সিঙ্গেল কামিজ। সাধারণত বাজারে যে টু-পিস বা থ্রি-পিস পাওয়া যায় তা থেকে সিঙ্গেল কামিজ একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত সিঙ্গেল কামিজের প্যাটার্ন কিছুটা ভিন্ন হয়। গলায় ভারি কাজ, স্ক্রিন প্রিন্টেড বা সুতার ভারি কাজ দিয়ে নকশা করা থাকে। কিছু আবার ডাবল পার্টের সিঙ্গেল কামিজের নকশাও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি ফ্যাশন হাউস ও শপে দেখা যাচ্ছে নানা ডিজাইনের সিঙ্গেল কামিজ। সিম্পল ও গর্জিয়াস দু’ভাবেই তৈরি করা হয়েছে এসব কামিজ। লং, এক্সট্রা লং এমনকি ফ্লোর টাচ ডিজাইন প্রাধান্য পেয়েছে কামিজের প্যাটার্নে। গরমের কথা মাথায় রেখে লিলেন ও সুতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে এক্সক্লুসিভ পোশাকগুলোতে নেট, বিভিন্ন ধরনের জর্জেট, মসলিন- এসব উৎসবধর্মী কাপড়ও ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন ডিজাইন ভেরিয়েশনে রয়েছে সালোয়ার কামিজের বিশাল সম্ভার। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের ডিজাইনাররা জানান এবারের ঈদ সালোয়ার-কামিজের আয়োজন থাকছে বেশি। সালোয়ার কামিজ সেকশনে সিঙ্গেল কামিজকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে সিঙ্গেল দোপাট্টা, পালাজো ও লেগিংস। পছন্দমতো যেকোন পোশাক যে-কেউ সহজেই বেছে নিতে পারবেন। সালোয়ার-কামিজে প্যাচওয়ার্ক, পাড়, লেস ও ডেকোরেটেড বাটন ব্যবহার করা হয়েছে কাজের মাধ্যম হিসেবে। এ ছাড়া কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, টাইডাইয়ের কাজও দেখা যাবে। এবারের ঈদ কালেকশনের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। এবারে ঈদ পোশাকে একদিকে যেমন পাওয়া যাবে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে পাওয়া যাবে বর্ষার রূপ। সাদা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনিসহ সব ধরনের রঙয়ের ব্যবহারে তৈরি করা হয়েছে এসব পোশাক।
×