ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১০ম দিবস। সিয়াম ও কিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা একে একে অতিক্রম করেছি বরকতময় মাসের রহমতের সুসংবাদবাহী ১ম দশক। আগামীকাল ১১ রমজানুল মোবারক থেকে শুরু হবে মাগফিরাতের মধ্যম দশক। প্রিয় উম্মতগণকে আমল, ইবাদত, রিয়াজত বন্দেগীতে উৎসাহ দেয়ার জন্য মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) এ মাসকে তিনভাগে বিভক্ত করে প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, আউয়ালুহু রাহমাহ ওয়া আউসাতুহু মাগফিরাহÑ এর প্রথম অংশ আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির, মধ্যম অংশ ক্ষমা ও মার্জনার আর শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে, সে অন্য মাসের ফরজ আদায়কারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়কারীর সমতুল্য। আমরা যেভাবে ইখলাসের সঙ্গে রহমতের এই প্রথম দশক উত্তীর্ণ হতে পেরেছি ঠিক সেভাবে দ্বিতীয় দশকে পূর্ণ বিধি বিধান অনুসরণ করে অতিবাহিত করতে পারি সেদিকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াতে ও মহানবীর বিভিন্ন হাদীসে মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির হৃদয়গ্রাহী বিধান বর্ণিত হয়েছে। পাপী তাপীরা যেন কখনও আল্লাহ তায়ালার অপার রহমত প্রাপ্তি থেকে নিরাশ না হয়। মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন: লা তাখনাতু মির রাহমাতিল্লাহÑ তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। সূরা হাদীদের ৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, হুয়াল আউয়্যালু ওয়াল আখিরু ওয়ায যাহিরু ওয়াল বাতিনুÑ তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই ব্যক্ত ও তিনিই গুপ্ত এবং তিনিই সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। সূরা আর রাহমানে বলা হয়েছে, ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর, অবিনশ্বর কেবল তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমাময়, মহানুভব; ফাবিআইয়্যি আ’লাঈ রাব্বিকুমা তুকাযযিবানÑ সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? (আয়াত ২৬Ñ২৮) আল্লাহ আরও বলেন, বস্তুত যে লোক দুনিয়ার বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতে দান করব। পক্ষান্তরে যে লোক আখিরাতের বিনিময় কামনা করবে তা থেকে আমি তাকে তাই দেব। আর যারা কৃতজ্ঞ আমি তাদের প্রতিদান দেবো। আর বহু নবী ছিলেন যাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে, আল্লাহর পথে তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্ত হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদের ভালবাসেন। আর যারা কিছুই বলেনিÑ শুধু বলেছে, হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদের দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের ওপর আমাদেরকে সাহায্য কর। (৩/১৪৫Ñ১৪৭)। তাদের এ মুনাজাত আল্লাহ কবুল করেছেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা ও মার্জনা দিয়েছেন, সাথে সাথে বিজয়ও দান করেছেন। দয়াময় আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করব। (৪:৩১)। যারা আমার আয়াতসমূহে ইমান আনে, তারা যখন হে প্রিয় নবী আপনার নিকট আসে তখন তাদের বলে দিন, সালামুন আলাইকুমÑ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তার কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞাতবশত যদি মন্দ কাজ করে অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন হয়ে যায়, তবে তো আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আনআম ৫৪)। হযরত শোয়াইব নবী (আ.) তার উম্মতদের আল্লাহর প্রতি ক্ষমা ভিক্ষা করার যে উপদেশ দিয়েছেন তা সূরা হূদে এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর; আমার প্রতিপালক তো পরম দয়ালু, প্রেমময়। (হূদ, ৯০)। হাদীসে কুদসীতে আলাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমার বান্দা যদি আমাকে পাওয়ার জন্য এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তাকে সাহায্য করার জন্য আমার কুদরতের হাতে দু’হাত অগ্রসর হই। মহান আলাহ মাহে রমজানের শুরু থেকে আমাদের জন্য রহমতের শামিয়ানা টাঙিয়ে দিয়েছেন। ভক্তির সাথে সাহরী গ্রহণ করে, পাঞ্জেগানা নামায আদায় করে, ইফতার মাহফিল ও তারাবীহর সালাতে শামিল হয়ে তার অবারিত রহমতের প্রত্যাশা করতে হবে। সূরা মু’মিন এর ৬০নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের প্রতিপালক বলে দিয়েছেন যে, তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা বিনয়কাতর অবস্থায় এবং চুপিচুপি ডাক। (সূরা আ’রাফ ৫৫)। মহানবী (স.) বলেছেন, যখনই কোন দল বসে বসে আল্লাহর যিকির করতে থাকে তখনই ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে এবং আলাহ পাকের রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে। তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হতে থাকে। আসন্ন মাগফিরাত দশক যেন সত্যি সত্যি আমরা ক্ষমাকাতর হয়ে অতিবাহিত করতে পারি সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যেতে হবে।
×