নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৫ জুন ॥ বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনায় প্রিন্স ফায়েজুল্লাহ্ (২৫) নামের এক শিবির ক্যাডারকে আটক করা হয়েছে। তার পকেটে ঢাকার জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারের চাবি পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সন্ত্রাসীরা জামায়াত-শিবির গোষ্ঠীর সদস্য। গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী (৪০) বুধবার কলেজের পরীক্ষার কাজ শেষে কলেজের পেছনে সোবাহান মুন্সীর ভাড়া করা বাসায় চলে যান। ওই বাসায় তিনি একাই থাকেন এবং বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে তার বাসার দরজায় নক করে ৩ যুবক। দরজায় নক করার শব্দ শুনে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী দরজা খোলা মাত্রই ৩ জন সন্ত্রাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার আর্তচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা প্রায় ১ কিমি দৌড়ে গিয়ে ডিসি ব্রিজ নামক স্থানে একটি ইজি বাইকে উঠে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় কলেজের স্টাফ মিরাজ একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এদিকে স্থানীয়রা ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক সন্ত্রাসী নিজেকে প্রিন্স ফায়েজুল্লাহ পরিচয় দিয়েছে। সে ঢাকার উত্তরার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তার পিতা গোলাম ফায়জুল্লাহ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পরিবারসহ সে ঢাকার উত্তরাতে থাকে। গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সংবাদ লেখা পর্যন্ত আটক যুবকের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল, এএসপি মনিরুজ্জামান ফকির, সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সাংবাদিকদের কাছে তৎক্ষণাৎ কিছু বলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে সরকারী নাজিমউদ্দিন বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিতেন চন্দ্র ম-ল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের অবস্থা গুরুতর। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষকের ওপর হামলাকারীরা কোন জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। আহত শিক্ষক রিপন চক্রবর্তী বরিশাল জেলার গৌরনদীর রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছেলে। তিনি দেড় বছর আগে বরিশাল থেকে বদলি হয়ে মাদারীপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজে যোগদান করেন।’
অধ্যাপক রিপন আশঙ্কামুক্ত
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, হত্যার উদ্দেশে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর (৪০) অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে এ কথা জানিয়েছেন, শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শরফুজ্জামান রুবেল।
অধ্যাপক রুবেল আরও বলেন, মাদারীপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর বুধবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় রিপন চক্রবর্তীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে আনার পর অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অধ্যাপক রিপনের মাথা, ঘাড়ে ও হাত মিলিয়ে সাতটি কোপ রয়েছে। রিপনের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে এখন তিনি অনেকটা আশঙ্কামুক্ত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: