ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাজারে আসছে বোনাসের এগারো হাজার কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৬ জুন ২০১৬

ঈদ বাজারে আসছে বোনাসের এগারো হাজার কোটি

এম শাহজাহান ॥ সরকারী-বেসরকারী চাকুরেদের বোনাসের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা আসছে ঈদ বাজারে। অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারী চাকরিজীবীরা আসন্ন রোজার ঈদে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার উৎসব ভাতা পেতে যাচ্ছেন। সপ্তম স্কেলে গত বছর ঈদে তাঁরা ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা উৎসব ভাতা পেয়েছিলেন। উৎসব বোনাসের বাড়তি এই টাকার পুরোটাই এবার ব্যয় হবে ঈদের কেনাকাটায়। এতে করে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত বিকাশ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে বুধবার আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, উৎসব ভাতা ১ জুলাইয়ের আগেও তোলা যাবে। সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল বেতন ধরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গত ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকর ধরা হলেও বিভিন্ন ভাতা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। অনলাইনে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে বকেয়া প্রদান করা হয়েছে। জানা গেছে, সরকারী চাকুরেদের সঙ্গে বেসরকারী খাতে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোনাসের পুরো টাকা ঈদ বাজারে কেনাকাটায় ব্যয় করা হয়। এছাড়া বেসরকারী খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মকর্তারা বোনাস পাবেন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বোনাসের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা এবার ঈদ বাজারে খরচ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, অষ্টম পে-স্কেল অনুযায়ী এ বছর সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় দ্বিগুণ বোনাস পেতে যাচ্ছেন। বোনাসের এই টাকা ঈদ উৎসবের কেনাকাটায় ব্যয় হবে। বেতন দ্বিগুণ হওয়ার সুবাধে গত বছরের তুলনায় বোনাসের অতিরিক্ত ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বাজারে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে বাড়বে কেনাকাটা। তিনি বলেন, এতে অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত বিকাশ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ঈদ বাজারে অভ্যন্তরীণ পোশাক, জুতা, গহনা, ফার্নিচার এমনকি খাবার-দাবারসহ সব ধরনের পণ্যের প্রাধান্য থাকে। বোনাস দ্বিগুণ হওয়ার কারণে কেনাকাটাও দ্বিগুণ হবে। জানা গেছে, সরকারী চাকুরেরা অষ্টম পে-স্কেল অনুযায়ী ইতোমধ্যে বাংলা নববর্ষ ভাতা পেয়েছেন। এবারের পহেলা বৈশাখের আগে তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ নববর্ষ ভাতা হিসেবে দেয়া হয়। আর এবার দ্বিগুণ হারে পেতে যাচ্ছেন ঈদ বোনাসের টাকা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে খুশি ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারাও। এবারের ঈদ কেনাকাটা কেন্দ্রিক বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে শুরু করে ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স, স্বর্ণসহ সবশিল্পে সবখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ উৎসব বোনাস পাওয়ার পরই মূল কেনাকাটা শুরু হবে। যদিও ইতোমধ্যে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেনাকাটাও বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, এবার ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। দোকান, শো-রুম ও ফ্যাশন হাউসগুলো ভরে উঠেছে নতুন পোশাকে। মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারী চাকুরেদের উৎসব বোনাসের টাকায় কেনাকাটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা সেভাবেই পোশাক-আশাক তৈরি ও আমদানি করেছেন। তবে ভ্যাট যেভাবে বাড়ানো হয়েছে তাতে সমস্যায় আছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্যাটের বোঝা ক্রেতার উপরও বর্তাবে। এ কারণে এবারের ঈদে পোশাকসহ সব ধরনের পণ্যেও দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী খাত চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি ও চাহিদা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে শিল্পখাতে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য এবং সেবা সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরে এপ্রিল শেষে বার মাসের গড়ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশ, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। সরকারী-বেসরকারী খাতের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আসন্ন ঈদে এর প্রতিফলন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×