ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়তে একযোগে কাজ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ জুন ২০১৬

জঙ্গীমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়তে একযোগে কাজ করতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো দক্ষিণ এশিয়াতেও বিস্তার লাভ করেছে, যা আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ। এরূপ বাস্তবতায়, নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিশ্ব নেতারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সকলের সহযোগিতায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সফল হব বলে আমরা আশা করি। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক ও বিমসটেকের আওতায় বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক চুক্তি/সমঝোতা স্মারক/কনভেশনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এসবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিকভাবে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাদির মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়া। আমরা মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনার বিস্তৃতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াকেও একটি দারিদ্র্যমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য দূরীকরণ যেহেতু শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত সেহেতু একটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া স্বাভাবিকভাবে শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় রূপ নেবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। সংসদ নেতা বলেন, ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর দেয়া রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে সর্বপ্রথম দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আঞ্চলিক কূটনীতির যে ধারণা তুলে ধরেন, তাতে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক এটি আমার আন্তরিক প্রত্যাশা। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ যেহেতু শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত সেহেতু একটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এ্রশিয়া স্বাভাবিকভাবেই শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই প্রতিবেশীদের মধ্যে নিষ্ফল-সংঘাতমূলক বৈরিতার চির অবসান হোক। আমাদের জাতীয় সম্পদ লক্ষ্যহীনভাবে অপচয় না করে বরং আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে তা ব্যবহৃত হোক। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, দক্ষিণ এশিয়াকে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাস করার ক্ষেত্রে আমরা সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করব। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়া। আমরা মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনার বিস্তৃতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াকেও একটি দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা। সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনের সময় বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ এই প্রশংসা পেয়েছে। সংসদ নেতা জানান, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ এমন একটি বিষয় যা যে কোন আন্তর্জাতিক ফোরামের যে কোন আলোচনায় সেটা আন্তর্জাতিক হোক, আর দ্বিপাক্ষিক হোক তা সব সময় উঠে আসে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের যে জিরো টলারেন্স ও কঠোর অবস্থান তা বিশ্ব নেতারা জানেন। জি-৭ সম্মেলনে আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও অনানুষ্ঠানিক কথা প্রসঙ্গে জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের যে পদক্ষেপ তারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নেতারা। সকলের সহযোগিতায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সফল হব বলে আমরা আশা করি। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ধারণা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ॥ আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব হবে যখন নারীকে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা যাবে। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন একজন নারী যদি দশটা টাকা আয় করতে পারে, সেই টাকা যদি তাদের আঁচলে থাকে তাহলে সমাজে তার গুরুত্ব বাড়ে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমি ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ধারণাটা পেয়েছি। সরকার গৃহীত একটি বাড়ি একটি পরিবার প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকল্পের বিস্তারিত দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামের পরিববারগুলোকে স্বাবলম্বী করতে এই প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে জলাভূমির ব্যবহার, অব্যবহৃত জমি চাষ এবং উৎপাদনের আওতায় এনে কৃষকের পণ্য বাজারজাতকরণের জন্যই এই প্রকল্প। যেখানে যেখানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে সেখানে ভাল ফল এসেছে। আমরা ‘সিলেক্ট’ (নির্ধারণ) করে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে এই প্রকল্প করে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে এই প্রাক্কলন সারাদেশেই বিস্তৃত করা হবে। দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। ধীরে ধীরে পরিধি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সৌদি আরবের সফর অত্যন্ত সফল ॥ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও হুইপ শহিদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সম্মান পাচ্ছি সেটি আমার একার নয়, বাংলাদেশের ও বাংলাদেশ জনগণের সম্মান। আমি এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। আমার কাজের মূল্যায়ন বিশ্ব নেতারা করেছেন। এজন্য বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। তারা ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছে বলেই আমি এই কাজ করতে পারছি। তাই দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভারতের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ॥ জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানের মহাসড়ক নেটওয়ার্ক পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় উন্নততর। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে মহাসড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ কয়েকটি আন্তঃদেশীয়, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের অসমের সঙ্গে শাহবাজপুর-করিমগঞ্জ রেলওয়ে ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টের মাধ্যমে ২০০২ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। বর্তমানে এ ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টটি পুনরায় চালু করার জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় প্রকল্পটি চালু আছে। প্রকল্পটির বিশদ ডিজাইন প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনে আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেলওয়ে লিংক ভারতীয় অনুদানে বাস্তবায়নে ভারত সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে। ফেনী-বিলোনিয়া সীমান্তে রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য টেকনো ইকোনমিক সার্ভে করার প্রস্তাব করেছে, তাতে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পত্তি দিয়েছে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার পরিকল্পনা ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতামূলক করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় উচ্চ ব্যাংক সুদহার। ব্যাংক সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে দেশের রফতানি মূল্যের ওপর ব্যাংক সুদহার যাতে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলতে না পারে সেজন্য শতকরা ৮ ভাগ হারে প্রি-ও পোস্ট শিপমেন্ট ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছে। শুল্ক বন্ড সুবিধাকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।
×