ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৬ জুন ২০১৬

রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়

হাসিনা সাঈদ দেশব্যাপী একের পর এক ঘটে চলেছে গুপ্ত হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-। যদিও দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চলছে, চলছে গ্রেফতার। কিন্তু কোনভাবেই যেন এ হত্যাকা-গুলো আটকানো সহজ হচ্ছে না। জঙ্গীদের এমন ‘টার্গেট কিলিং’ মিশন পুরো জাতি ভয়াবহভাবে আতঙ্কগ্রস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জঙ্গীরা এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। হত্যাকা- বা গুপ্তহত্যার আলামত অনুসরণ করলে বোঝা যায়, এই হত্যাগুলো ঘটানো হচ্ছে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন যেন ক্রমেই হোঁচট খাচ্ছে বেপরোয়া এসব হত্যাযজ্ঞ দেখে। দুর্বল ও ধরাশায়ী হচ্ছে কূলকিনারা খুঁজে পেতে। গত বছরের (২০১৫) ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে খুন হয়েছে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। এদের মধ্যে শিক্ষক, লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত, সেবক, বিদেশী নাগরিক, দর্জি, মুদির দোকানদার এবং রয়েছেন পুলিশ পরিবারের সদস্য। নিহতদের মধ্যে অনেকেই হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। এসব হত্যাকা-ের তদন্তে কয়েকটির অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেলেও, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এখন পর্যন্ত পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে পারছে না। পারছে না তাৎক্ষণিক আটক করতে। সম্প্রতি এসব টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনাগুলো গোয়েন্দা সংস্থা পর্যালোচনা করছে। তাতে নিশ্চিত হয়েছে যে, চলতি বছরজুড়ে সংগঠনগুলোর এসব অপারেশন অব্যাহত থাকবে। তবে জঙ্গী নির্মূলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কম্বিং অপারেশন বা সাঁড়াশি অভিযান। প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে যৌথবাহিনী দিয়ে অভিযান চালানো হবে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ভারত সরকারের দৃষ্টি বর্তমান সরকারের ওপর থেকে সরিয়ে নেয়ার তাগিদে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে শুরু হয়েছে এসব হত্যাকা-। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমানোর জন্য সারাদেশে জঙ্গী দমনে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগন্তুক ও ভাড়াটিয়াদের ওপর নজরদারি বাড়ানো, বিদেশীদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশ কার্যকর করা হচ্ছে বলেও জানান হয়। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে টার্গেট কিলিং এ- পরিকল্পনাকারী হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাহিরী, তামীয়-উদ-দ্বীন ও কতিপয় মাদ্রাসাকেন্দ্রিক জঙ্গী সংগঠনের ছোট ছোট গ্রুপ এসব টার্গেট কিলিংয়ে জড়িত। এদের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তথ্যপ্রযুক্তি থেকে জ্ঞান অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের প্রভাব রয়েছে বলে তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে রয়েছে জঙ্গী সংগঠনের একাধিক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ও গোয়েন্দাসংস্থার সঙ্গে যোগসূত্র। যাদের পরিকল্পনায় এসব টার্গেট কিলিং ঘটছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, উগ্রপন্থীদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতে না পারলে কোন প্রতিরোধই কাজে আসবে না। আর সেজন্য পুলিশ নয়, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও একযোগে কাজ করতে হবে। এই টার্গেট কিলিং থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে পুরো জাতির এখন একটাই দাবি- স্থায়ী ও সুষ্ঠু প্রতিরোধ ও নিশ্চিত সুনিরাপত্তা ব্যবস্থা। লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা থেকে
×