ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসান ঝুঁকিতে ২২০ বিনিয়োগকারী ॥ দুদকের অনুসন্ধান শুরু

হোমষ্টোন কোম্পানির ৩০ কোটি টাকার জালিয়াতি

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১৫ জুন ২০১৬

হোমষ্টোন কোম্পানির ৩০ কোটি টাকার জালিয়াতি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ হোমষ্টোন লিমিটেড কোম্পানির বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কোম্পানি এমডি শহীদুল আলম ও চেয়ারম্যান ডালিয়া আলম কক্সবাজার শহরের নির্মাণাধীন ‘দি সী-প্রিন্সেস হোটেল’-এর নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা মিডফোর্ড শাখা থেকে প্রতারণামূলক ৩০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ হাতিয়ে নেন। আর এ ঋণের টাকা সুদসহ বর্তমানে ৫০ কোটিতে এসে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রেখে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘হোমষ্টোনের মালিকগণের এ জালিয়াতির ঘটনায় হোমষ্টোনের এমডি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১০ ও ১১ জুন কক্সবাজার শহরের কলাতলী সী ইন পয়েন্টের ‘দি সী প্রিন্সেস হোটেলে’ আসেন দুদকের উপ-পরিচালক এস এম রফিকুল ইসলাম। তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাক্ষ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অপরদিকে সবার অজান্তে খোদ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ৩০ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ‘দি সী-প্রিন্সেস হোটেল’-এ ২২০ বিনিয়োগকারীর কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে। সূত্রে জানা যায়, মূলত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ঢাকা মিডফোর্ড শাখার কয়েকজন উর্ধতন কর্তার যোগসাজশে ঋণ জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে। আর জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হোমষ্টোনের এমডি শহীদুল আলম বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত এবং মানি লন্ডারিং করে বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। দি সী-প্রিন্সেস হোটেল ওনার্স সোসাইটি’র সভাপতি জামিল আসাদুল হক সোহেল বলেন, হোটেলটি নির্মাণের সময় বিভিন্ন সাইজের স্টুডিও এ্যাপার্টম্যান্ট বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ওই কোম্পানির প্রচারিত ব্রুশিয়ার, ক্যাটালগের মাধ্যমে ২০০৮ সালে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করলে আমরা ২২০ জন স্যুট ক্রেতা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে হোটেলটিতে স্যুট ক্রয় করি। পরে ২০১৪ সালের মে মাসে আমরা জানতে পারি হোটেলের সকল স্যুট/ফ্ল্যাট আমাদের কাছে চড়া দামে বিক্রয়ের পরও হোমষ্টোন লি:-এর চেয়ারম্যান ডালিয়া আলম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলম ওই সময়ে ঢাকার মিডফোর্ড শাখার শাহজালাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে ৩টি মঞ্জুরি পত্রের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ওই ঋণ সুদে আসলে এখন প্রায় ৫০ কোটি টাকায় এসে পৌঁছেছে। উক্ত ঋণের অর্থ ৩৬টি কিস্তিতে উত্তোলন করার শর্ত ছিল। কিন্তু কতিপয় অসাধু ব্যাংক পরিচলক-কর্মকর্তার গোপন সমঝোতার মাধ্যমে মাত্র ৩-৪টি কিস্তিতে মঞ্জুরিকৃত সমুদয় টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। উক্ত ঋণ মঞ্জুরির পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ৬ বছরে (ফেব্রুয়ারি ২০১০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত) কোন প্রকার বন্ধকী সাইনবোর্ড দি সি-প্রিন্সেস প্রকল্পের সমুখে প্রদর্শন করেনি। উক্ত সময়ের মধ্যে শত শত বিনিয়োগকারী প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ সরেজমিনে দেখার জন্য যান। কিন্তু প্রকল্পটি ব্যাংকে বন্ধকী আছে মর্মে এ ধরনের কোন প্রকার বন্ধকী সাইনবোর্ড দেখতে পাননি। ঋণের মেয়াদ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৫ সালের মার্চে রাতের আঁধারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উক্ত সম্পত্তির ওপর ব্যাংকের নামে বন্ধকী আছে জানিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করে। জানা গেছে, হোমষ্টোন লি: কর্র্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে কাজ শুরুর পরই কিছু এ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় করে। কিন্তু বিক্রয়ের তথ্য গোপন করে ক্রেতাদের না জানিয়ে ব্যাংকে সমুদয় সম্পত্তি বন্ধক রাখে। আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই হোটেল প্রকল্পটি ব্যাংকে আমানত হিসেবে বন্ধক গ্রহণ করে। এছাড়াও ২০০৯ সালে ব্যাংকে বন্ধক রাখার পরও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের জ্ঞাতেই অবৈধভাবে তাদের বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এতে জালিয়াতচক্রের সঙ্গে ব্যাংকের অসাধু কর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে উঠে। এদিকে ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে (গ্রেস পিরিয়ডসহ) স্যুট হস্তান্তরের করার কথা থাকলেও অদ্যাবধি তারা স্যুট হস্তান্তর-রেজিস্ট্রেশন করে দেননি। চুক্তিপত্র মোতাবেক স্যুটের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করার পর ১ম-পক্ষ (মালিক) স্যুটসহ প্রাপ্য জমির অংশসহ সাব-কবলা মূলে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে বাধ্য। কিন্তু তা করা হয়নি।
×