ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁড়াশি অভিযানের চতুর্থ দিন

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ২ সদস্যসহ গ্রেফতার তিন হাজার

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৫ জুন ২০১৬

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ২ সদস্যসহ গ্রেফতার তিন হাজার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী চলমান সাঁড়াশি অভিযানের চতুর্থ দিনে ২৬ জন জঙ্গীসহ ৩ হাজার ১১৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যও রয়েছে। এ দুই সদস্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটিত হতে পারে। এজন্য আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এছাড়া চলমান অভিযানে উদ্ধার হয়েছে নানা ধরনের দেশী-বিদেশী অস্ত্রগোলাবারুদ। আর টানা চারদিনের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম ও মোঃ আরিফুল ইসলাম সোলায়মান ওরফে আরাফাত নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জঙ্গী সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহ ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ছিল। গ্রেফতারকৃত মোজাহিদুলের বাড়ি কুমিল্লায়। আর সোলায়মান ওরফে আরাফাতের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত চাপাতি কোন হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা এবং ২টি জিহাদী নোটে থাকা তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মনিরুল ইসলাম জানান, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি)-এর মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোর উদ্দেশের সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মিল রয়েছে। অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠককারীরা দেশকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বিপাকে ফেলতে চায়। আর জঙ্গী সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্য একই। পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে বেশকিছু ব্যবসায়ী অর্থ দিচ্ছেন। তাদের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, ডিবি পুলিশ দুই জঙ্গীকে মঙ্গলবারই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে পাঠায়। দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশিদ আলম শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে পুলিশ সদর দফতর জানায়, সোমবার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চতুর্থ দিনের মত সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান জানান, দেশব্যাপী জঙ্গী বিরোধী বিশেষ অভিযানে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৬ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন জেএমবি, ৫ জন হিযবুত তাহরীর, ১ জন আল্লার দল, ১ জন হুজি এবং ৭ জন অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের সদস্য রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে ১ জন হুজি, টাঙ্গাইল থেকে ১ জন জেএমবি, ময়মনসিংহ থেকে ২ জঙ্গী, শেরপুর থেকে ২ জঙ্গী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে ১ জঙ্গী (আফগান ফেরত), নোয়াখালী থেকে ১ জন হিযবুত তাহরীর, রাজশাহী থেকে ১ জন জেএমবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ জন হিযবুত তাহরীর, নওগাঁ থেকে ১ জন জেএমবি, বগুড়া থেকে ১ জন জেএমবি, যশোর থেকে ২ জন হিযবুত তাহরীর, ঝিনাইদহ থেকে ১ জন জেএমবি ও ১ জন আল্লাহর দলের সদস্য, কুষ্টিয়া থেকে ১ জন হিযবুত তাহরীর, রংপুর থেকে ১ জন জেএমবি, গাইবান্ধা থেকে ১ জন জেএমবি, দিনাজপুর থেকে ১ জন জেএমবি, ঠাকুরগাঁও থেকে ১ জন জেএমবি, পঞ্চগড় থেকে ১ জন জেএমবি, ঝালকাঠী জেলা ১ জন জেএমবি, পটুয়াখালী থেকে ১ জন জেএমবি ও ঢাকা থেকে ২ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সদস্য রয়েছে। জঙ্গী ছাড়াও চতুর্থ দিনের অভিযানে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার ও অন্যান্য মামলায় মোট ৩ হাজার ৮৯ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে ২ হাজার ৩৬৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৩৮ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ২৯৫ জন এবং অন্যান্য মামলায় ৩৮৮ জন রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে ৭টি বিদেশী পিস্তল, ২টি দেশী পিস্তল, ১টি এলজি, ৪টি রিভলবার, ২টি শূটারগান, ২টি ওয়ান শূটারগান এবং ৫টি দেশী পাইপগান রয়েছে। এছাড়া, ১০টি ম্যাগাজিন, ১৮ রাউন্ড গুলি, ১১টি কার্তুজ, ৬টি ককটেল, ৫০০ গ্রাম গান পাউডার, ৪টি চাপাতি, ২টি কালো স্কুল ব্যাগ, বেশ কিছু সরকার বিরোধী লিফলেট, উগ্রপন্থী বই এবং অন্যান্য ধারালো অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য রয়েছে। এছাড়া চতুর্থ দিনের অভিযানে ৬৮৭টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে গত চারদিনের টানা অভিযানে ১১ হাজার ৬৮৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্যে জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে ১৪৫ জন। গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর একটি মোটরসাইকেলে তিন হত্যাকারী পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের সঙ্গে ইতোপূর্বে জঙ্গী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকা-ের হুবহু মিল রয়েছে। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বহু জঙ্গী গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছেন। বাবুল আকতারের স্ত্রী খুন হওয়ার পর গত ৯ জুন পুলিশ সদর দফতরে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পরদিন শুক্রবার ভোর থেকেই সারাদেশে অভিযান চলছে।
×