ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৫ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের আজ ৯ম দিবস। আজ আমরা পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার গুরুত্বের ওপর কিছু কথা বলব। পবিত্রতা হলো একজন মানুষের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থা আর অপবিত্রতা নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত অবস্থা। মানুষের কর্তব্য ও বৈশিষ্ট্যই হলো সর্বদা নিকৃষ্টতা পরিহার করে সাধ্যমতো উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থায় থাকা। যারা ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করেন, পবিত্র থাকেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন। পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায় করার জন্যে শরীর, পোশাক ও স্থান তথা পরিবেশ পবিত্র হওয়া অপরিহায্য। পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। আল্লাহপাক আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন: যে ব্যক্তি ভেতরে বাইরে পবিত্রতা অর্জন করে, সে অবশ্যই সাফল্যলাভ করে।-(সূরা আ’লা-১৫)। আমরা নানা রকম কাজ করি- আমাদের হাত, পা, শরীর ও কাপড় চোপড় ময়লা হয়, ধূলাবালি লাগে। ঘামে শরীর ভিজে যায়, দুর্গন্ধ হয়। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁতে ময়লা লাগে। দাঁত, মুখ পরিষ্কার না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য অজু করার আগে দাঁত মাজতে হয়, মেসওয়াক করতে হয়। মহানবী (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হলে, প্রত্যেক অজুর আগে আমি মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। অনেকের নখ, চুল বড় হয়। দেখতে খারাপ লাগে। নখ বড় হলে নখে নানা রকম ময়লা জমে, তা খাবারের সাথে পেটে যায় এবং পেটের অসুখ হয়। নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে। জুমার দিন নখ কর্তন করা মুস্তাহাব। হামীদ ইবনে আবদুর রহমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হুজুরে পাক (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটে, সে সুস্থ থাকে। অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়। বৃহস্পতিবার আছরের পরেও নখ কর্তন করার প্রতি ধর্মীয় পর্যায়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ওয়াকী হযরত আয়েশা (রাদি.) হতে বর্ণনা করেন, হুজুরপাক (স.) এরশাদ করেছেন, হে আয়েশা! তুমি নখ কাটবারকালে প্রথমে মধ্যমা, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর অনামিকা এবং সর্বশেষ তর্জনীর নখ কাটবে। নখ কাচি অথবা চাকু দ্বারা কাটবে। দাঁত দ্বারা নখ কাটা মাকরুহ। বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (স.) নখ কাটার পর উহা মাটি চাপা দিয়ে রাখার হুকুম দিয়েছেন। নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে ফেলবে।-(গুনিয়াতুত ত্বালেবীন)। হযরত আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেছেন: যখন কোন মুমিন অথবা মুসলিম বান্দা অজু করে এবং চেহারা ধোয়, (তার চেহারা থেকে) তার চোখের দ্বারা কৃত সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার হাত ধোয়, তার দু’হাতে কৃত সমস্ত গুনাহ তার হাত থেকে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। অতঃপর সে ব্যক্তি সমস্ত গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়-(মুসলিম)। উল্লেখ্য, অজু করার সময় অবশ্য পালনীয় কাজসমূহ নির্দেশ করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন- হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখম-ল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে আর পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে।-(৫:৬)। উপরোক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, অজুর ফরয চারটি। পক্ষান্তরে, আমাদের এ বিষয়টিও জেনে রাখা ভাল, গোসলের ফরয তিনটি: এক. কুলি করা, দুই. নাকে পানি দেয়া, তিন. সমস্ত শরীর একবার ধৌত করা।-(আলমগীরী)। আমরা নানা ধরনের কাজকর্ম করি। আমাদের কাপড় চোপড় ময়লা হয়। ময়লা কাপড় চোপড় পরলে শরীর খারাপ হয়। নানারকম রোগ হয়। মন ভাল লাগে না। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহপাক বলেন: ‘তোমার কাপড় পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখ’। মহানবী (স.) সবসময় পবিত্র কাপড় পরতেন। শরীর পরিষ্কার রাখার মতই কাপড় চোপড় পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। অপবিত্র শরীরে যেমন সালাত আদায় করা যায় না, তেমনি অপবিত্র পোশাকেও সালাত আদায় করা যায় না। কেননা হুজুর (স.) বলেছেন: পবিত্রতা অর্জন করা নামাজের চাবি।-(তিরমিযী)।
×