ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অযথা হয়রানি নয় ॥ কম্বিং অপারেশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ জুন ২০১৬

অযথা হয়রানি নয় ॥ কম্বিং অপারেশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

তপন বিশ্বাস ॥ অযথা কাউকে হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মঙ্গলবার আইজিপিকে ডেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের কোন মানুষকে যাতে অযথা হয়রানি বা গ্রেফতার করা না হয় সে জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়ায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার রাতে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, অভিযান চলবে, তবে দেশের কোন মানুষকে যেন অযথা হয়রানি বা গ্রেফতার না করা হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে গিয়ে তিনি আইজিপিকে ডেকে পাঠান। দেশে চলমান এই গ্রেফতারের প্রসঙ্গে আইজিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, বিভিন্ন সময়ের যে সকল ‘ওয়ারেন্ট ইস্যু’ ছিল, সেগুলো কার্যকর করা হচ্ছে। বিগত ৯ জুন মধ্যরাত থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। দেশব্যাপী টার্গেট কিলিং বন্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতির লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট। টার্গেট কিলার কারা এবং তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতে তৎপর গোয়েন্দারা। একই কায়দায় সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের কুপিয়ে হত্যাকা- ঘটানো এবং হত্যাকা-ের পর পরই আন্তর্জাতিক ওয়েব সাইট থেকে আইএস’র নামে দায় স্বীকার করার ঘটনার নেপথ্যে যে সহিংস সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জড়িত সেই তদন্তে নিশ্চিত তারা। কিন্তু টার্গেট কিলাররা কোথা থেকে এসে কিলিং শেষে আবার কোথায় গিয়ে অদৃশ্য হয়ে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন সেই প্রকৃত কিলারদের চিহ্নিতকরণ করে রহস্য উদ্ঘাটনের তদন্তে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে অভিযান শুরু করলেও পরদিন শুক্রবার পাবনায় অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমের সেবায়েতকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার পর অবশ্য আর কোন গুপ্ত হত্যা এখনও ঘটেনি। ২০১৩ সাল থেকে গত ৩ বছরে সারাদেশে ৪৯টি জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলায় প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, শিক্ষক, পুরোহিত, মুয়াজ্জিন, ধর্মযাজক, বিদেশী, মানবাধিকার কর্মী, সেবক, দর্জি, মুদি দোকানি, পুলিশ ও পুলিশ পরিবারের সদস্য, হিন্দু, খ্রিস্টান, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও মতাবলম্বীসহ ৫২ জনকে গুপ্ত হত্যা করেছে খুনী চক্র, যাদের পরিচয় বলা হচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী। একই কায়দায় খুন করে চলেছে টার্গেট কিলাররা। এর মধ্যে বিগত শনিবার রংপুরের পুরোহিত উত্তম কুমার মোহন্তকে অপহরণের পর উদ্ধার করা হয়েছে। পাবনার হেমায়েতপুরে সেই একই কায়দায় খুন হলেন শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পা-ে (৬২)। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করা হয়। একই দিনে খুন হন নাটোরে মুদি দোকানি সুনীল গোমেজ। এর আগে খুন হন ঝিনাইদহে পুরোহিত আনন্দ গোপাল। এখন যারা নিহত হচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই হিন্দু ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী। পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে টার্গেট কিলিং, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা খুঁজেই পাচ্ছেন না। এটা কি পুলিশের গাফিলতি না কি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে এটি করছে তাও এখন সাধারণ মানুষের আলোচ্য বিষয়। সম্প্রতি যে সকল হত্যাকা-ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা গোয়েন্দারা খুঁজেই পাচ্ছেন না এমন ঘটনার মধ্যে রয়েছে গত ৭ এপ্রিল সূত্রাপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়। দুই মাস পরও এ ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজে পাঁচজনকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় শরিফুল ইসলাম শিহাব নামে পুলিশ সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামিরা এখনও ধরা পড়েনি। গত ৩০ এপ্রিল টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়ার্দারকে হত্যা করা হয়। পুলিশ বলছে, ওই ঘটনায় জেএমবির সম্পৃক্ততা রয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মূল আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ছাড়া গত বছরের ২ নবেম্বর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার ঘটনায় একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুলের ওপর হামলাকারীরা এখনও আইনের আওতায় আসেনি। এসব টার্গেট কিলিং ঘটলেও টার্গেট কিলাররা চিহ্নিত হচ্ছে না কেন? কিংবা কারা করছে তাও হদিস করতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টার্গেট কিলারদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দিতে পারলে টার্গেট কিলিং-এর পুনরাবৃত্তি ঘটত না। বিশেষ অভিযানে বিগত পাঁচ দিনে সারা দেশে গ্রেফতারের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৮৪। এর মধ্যে জঙ্গী সন্দেহে রয়েছে ১৪৫। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে জঙ্গী অভিযান শুরু করে পুলিশ।
×