ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমকাম বিরোধিতাই কারণ!

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ জুন ২০১৬

সমকাম বিরোধিতাই কারণ!

সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ছিল অরল্যান্ডো নৈশক্লাবে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত ওমর মতিনের। তার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক তথ্য পাওয়া গেছে। পেশায় নিরাপত্তা প্রহরী মতিনের তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। শনিবারের ওই হামলায় ৫০ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একে সন্ত্রাসী হামলা ও ঘৃণার কাজ অভিহিত করেছেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। তার পুরো নাম ওমর মীর সিদ্দিক মতিন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী আফগান অভিবাসীর সন্তান মতিন ২০০৬ অপরাধ বিচার প্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রী নেন। এক বছর পর তিনি যোগ দেন বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি জিফোরএসে। ২০০৯ সালে তিনি উজবেকিস্তান থেকে আসা এক অভিবাসী নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে মতিন বদলে যেতে থাকেন বলে তার সাবেক স্ত্রী সিতরা ইউসুফি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মতিনের ব্যবহার দিনের পর দিন কঠিন হতে থাকে, যে কারণে তিনি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। মতিনের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ রয়েছে, এ ধরনের সংবাদ আসার পর ২০১৩ সালে ফেডারেল বুরে‌্যা অব ইনভেস্টিগেশন তাকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সে রকম কোন তথ্য না পাওয়ায় এফবিআই এ তদন্ত বাদ দেয়। ২০১৪ সালে এফবিআই সন্দেহ করে মতিনের সঙ্গে মনির আবুসালহার সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে। আবুসালহা প্রথম মার্কিন নাগরিক, যিনি সিরিয়ায় আল কায়েদা দলছুট অংশ আননুসরা ফ্রন্টে যোগ দেন। এ পর্যায়ে আবার তদন্ত হয়। এতে তাদের দুজনের মধ্যে এত কম যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায় যে এফবিআই তদন্ত বাদ দেয়। মতিন শেষ পর্যন্ত স্থানীয় একটি অখ্যাত স্কুলে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি একই সঙ্গে ফ্লোরিডা সিকিউরিটি লাইসেন্সও নিজের কাছে রাখতেন। ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবারের হামলার ১২ দিন আগে তিনি দুটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। একটি ছিল ৯ মিলিমিটার সেমি অটোমেটিক পিস্তল, অপরটি পয়েন্ট ২২৩ ক্যালিবার এ্যাসল্ট রাইফেল। অরল্যান্ডো থেকে ১২৫ মাইল দূরে সেন্ট লুসি কাউন্টি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি তিনি কেনেন। সেন্ট লুসিতেই বেড়ে ওঠেন মতিন। অপরাধকর্মের জন্য তিনি কখনও গ্রেফতার হননি বলেও সরকারী নথিপত্র থেকে জানা গেছে। ওমর মতিনের পিতা বলেছেন, ধর্ম নয় তার ছেলের সমকামীবিরোধী মনোভাবই হামলার কারণ। ২৯ বছর বয়সী মতিন মাঝে মধ্যে মসজিদে যেতেন, তবে কোন ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠীর সঙ্গে তার সংশ্রব ছিল না। এনবিসি টেলিভিশনকে মতিনের পিতা বলেছেন, ‘এ হামলার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই, সম্প্রতি মায়ামিতে একটি সমকামী যুগলকে চুম্বনরত অবস্থায় দেখার পর সে (মতিন) ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। এতগুলো লোকের প্রাণহানিতে গোটা দেশের মতোই তিনিও শোকাভিভূত।’ তিনি এ জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। মতিন যে খুবই সমকামবিরোধী ছিলেন সেটি বিভিন্ন সময় তার সহকর্মী এবং সাবেক স্ত্রীর বক্তব্য থেকে জানা যায়। এফবিআইয়ের কর্মকর্তা রোনাল্ড হপার বলছেন, আমরা আভাস পাচ্ছি যে, লোকটির উগ্রপন্থী ইসলামী আদর্শের প্রতি ঝোঁক ছিল, যদিও তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছি। প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশের বর্ণনা থেকে জানা যায়, পাল্স নামের নাইট ক্লাবটি শহরের সমকামীদের একটি প্রধান কেন্দ্র। এখানেই শনিবার স্থানীয় সময় রাত দু’টোর দিকে আক্রমণ চালায় বন্দুকধারী। বন্দুকধারী নাইটক্লাবের ভেতরে চারদিকে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে এবং কিছু লোককে জিম্মি করে। গুলিবর্ষণ শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা পর পুলিশ জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য নাইট ক্লাবে ঢোকে। পোপ ও রানী এলিজাবেথের শোক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওরল্যান্ডোর একটি সমকামী নৈশক্লাবে শনিবারের গুলিবর্ষণের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পোপ ফ্রান্সিস ও ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ। ওই ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত এবং ৫০-এর বেশি লোক আহত হয়। খবর এএফপি ও বিবিসির পোপ এই ঘটনাকে ‘নরহত্যা ও কা-জ্ঞানহীন ঘৃণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ওবামা বলেছেন, ‘একটি সন্ত্রাসী হামলা ও ঘৃণাপ্রসূত কাজ’। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের অফিসিয়াল টুইটে বলা হয়েছে এই ঘটনায় রানী শোকাভিভূত। বার্তায় রানী ও তার স্বামীর পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান হয়। শনিবারের ওই বন্দুক হামলা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে এ যাবতকালে গুলিবর্ষণে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা। এ ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো শোক জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। বন্দুক হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত ওমর মতিন একজন আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। ওবামার কাছে পাঠানো শোকবার্তায় গনি লিখেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অরল্যান্ডো হামলার নিন্দা জানাই
×