ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ৫ বছরেও ঢাকা মহানগর কমিটি করতে পারেনি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৪ জুন ২০১৬

বিএনপি ৫ বছরেও ঢাকা মহানগর কমিটি করতে পারেনি

শরীফুল ইসলাম ॥ দীর্ঘ ৫ বছরেও ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করতে পারেনি বিএনপি। এক্ষেত্রে বারবার দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ২ বার আহ্বায়ক কমিটি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার তাগিদ দিলেও প্রভাবশালী নেতাদের বিরোধের কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে বিস্তর অভিযোগ জমা হলেও তিনি এ ব্যাপারে জোরালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাই ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যক্রম এখন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাদেক হোসেন খোকা ও আব্দুস সালামের নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙ্গে ২০১১ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক এবং আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন খালেদা জিয়া। এ আহ্বায়ক কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব নিয়ে তখন ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু খোকা-সালাম নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্য সাদেক হোসেন খোকা অনুসারী হওয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা কমিটি গঠনে অসহযোগিতা করেন। এ কারণে নতুন করে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা অনুসারীদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ায় কমিটি গঠনে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ৩ বছর পরও ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সাদেক হোসেন খোকা কারাবন্দী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলন চাঙ্গা করতে না পারায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাদের দায়ী করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চাইলে কাউকে কাউকে তিনি ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। তিনি অবিলম্বে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে মহানগর নেতাদের নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর তখন বিএনপির কিছু নেতা ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের প্রচেষ্টা চালালেও সাদেক হোসেন খোকা কারামুক্ত হওয়ার পর ওই প্রচেষ্টা থেমে যায়। অভিজ্ঞমহলের মতে, দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি না থাকায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কোন আন্দোলন কর্মসূচীই সফল হয়নি। এ পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তার মধ্যে মির্জা আব্বাস অনুসারীদের পাল্লা ভারি হওয়ায় এ কমিটিতে থাকা খোকা অনুসারী বেশ কয়েক নেতা পরিস্থিতির কারণে নিরপেক্ষ হয়ে পড়েন। খোকা অনুসারী কিছু নেতা আব্বাস অনুসারীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আর পরে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করলেও ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ে তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখেন। অপরদিকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলও মির্জা আব্বাসের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হন। এ কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়া দূরে থাক ৯০টি ওয়াডের্র মধ্যে অধিকাংশ ওয়ার্ড কমিটিই করা সম্ভব হয়নি। সেই সঙ্গে থানা কমিটিগুলোও হয়নি। যেখানেই থানা বা ওয়ার্ডের কাউন্সিল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে সেখানেই গ্রুপিং-কোন্দল সৃষ্টি করে অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। জানা যায়, মূল দলে প্রভাব বিস্তারের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ২ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস ঢাকা মহানগর বিএনপির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চান। আর এ কারণেই তারাও তাদের অনুসারীদের বেশি করে কমিটিতে স্থান দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। আবার হাবিব-উন-নবী খান সোহেলও তার লোকদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করতে চান। আর এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই পরষ্পরবিরোধী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে, গত বছর ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের আন্দোলন কর্মসূচীতে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে রাজপথে দেখা যায়নি। এ আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকেও মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি যুগ্মআহ্বায়কের মধ্যে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, এমএ কাইয়ুম ও আবু সাঈদ খান খোকনও আন্দোলনে মাঠে নামেননি। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্যরাও মাঠে নামার চেষ্টা করেননি। এ পরিস্থিতিতে খোকার অনুসারী নেতারা তাদের বিরুদ্ধে সরব হন। আর খালেদা জিয়াও বুঝতে পারেন এ কমিটি দিয়েও কাজ হবে না। তাই ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
×