ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন কার্বাইড ধরা পড়ছে না ॥ পরীক্ষার যন্ত্রই ত্রুটিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৪ জুন ২০১৬

ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন কার্বাইড ধরা পড়ছে না ॥ পরীক্ষার যন্ত্রই ত্রুটিপূর্ণ

মশিউর রহমান খান ॥ গত এক বছরে রাজধানীর ছোট বড় কোন বাজারের কোন দোকানের মাছ মাংস ফলমূল কিংবা কোন খাদ্যেই ফরমালিন বা কার্বাইড খুঁজে পায়নি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবিত ফরমালিন পরীক্ষার এই যন্ত্রগুলো কোন কাজেই আসছে না। ফলে গত এক বছর রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফরমালিনের অস্তিত্ব খুঁজতে অসংখ্যবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও ফরমালিনযুক্ত কোন পণ্যই মেলেনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। শুধু ফরমালিন পরীক্ষার কোন সঠিক শনাক্তকরণ যন্ত্র না থাকায় ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও ফল বা মাছে কোন প্রকার ফরমালিন বা কার্বাইড আছে কি না তা পরীক্ষা করা বন্ধ রেখেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। বছরব্যাপী পাঠানো প্রতিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপর বেজায় নাখোশ। কোন প্রকার ফরমালিন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ সন্দিহান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভবিষ্যতে বিষয়টির ওপর আরও দায়িত্বশীল হতে দুই সিটি কর্পোরেশনকে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অপরদিকে বাজারের বিক্রেতারা তাদের পণ্যে ফরমালিন রয়েছে বলে স্বীকার করলেও সিটি কর্পোরেশনের মেশিনে কোন ফরমালিন না পাওয়ায় এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ক্রেতা বিক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। ফলে রাজধানীবাসী ফরমালিনযুক্ত ফল খাচ্ছেন নাকি ফরমালিনমুক্ত খাবার খাচ্ছেন তাই জানতে পারছেন না। ফলে ভোক্তা অধিকার পুরোপুরি লঙ্ঘিত হচ্ছে। দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা বন্ধ রাখায় ভেজাল পণ্য বিক্রেতারা দেদার তাদের পণ্য বিক্রি করছেন। এতে ফরমালিন মিশ্রিত পণ্য খেয়ে নাগরিকরা প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন। রাজধানী প্রায় প্রতিটি কাঁচাবাজারের মাছ, শাক-সবজি ও ফলে ফরমালিন পরীক্ষা করে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ)। গত কয়েক বছর ধরেই এ অভিযান চলছে। কিন্তু সম্প্রতি এ যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি বিক্রেতা তার পণ্যে ফরমালিন থাকার কথা স্বীকার করলেও যন্ত্রে ফরমালিন ধরা না পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এখন যন্ত্রগুলো নিয়েই বেকায়দায় পড়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতারাও নিশ্চিত করে যে মাছটিতে ফরমালিন রয়েছে বলে জানালেও সেই মাছটিই আবার এ মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত। বিষয়টি প্রকৃতই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবিত ফরমালিন পরীক্ষার এই যন্ত্রগুলোতে গত এক বছর ধরেই কোন বাজারে মাছ বা শাকসবজিতে ফরমালিন খুঁজে পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সংস্থাটিকে চিঠি দিতে বাধ্য হয়েছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। চিঠিতে ফরমালিন পরীক্ষা করার কোন যন্ত্র না থাকায় এ বিষয়ে করণীয় কি তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন মাছে ফরমালিন পরীক্ষার যে যন্ত্র ব্যবহার করছে তা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এই যন্ত্র দিয়ে ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করতে গিয়ে ভুল রিডিংয়ের কারণে শত শত টন ফল ধ্বংসও করা হয়েছে। এরপর ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্রের কার্যকারিতা চ্যালেঞ্জ করে এক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৪ নবেম্বর উচ্চ আদালত খাদ্য ও ফলমূল পরীক্ষার জন্য সঠিক ফরমালিন পরিমাপক যন্ত্র নির্বাচন এবং সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আদালত খাদ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ৩০ দিনের মধ্যে ওই যন্ত্র সংগ্রহে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এরপর থেকে মাছে ফরমালিন শনাক্তের জন্য সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হলেও ফলে ফরমালিন শনাক্তের কোন যন্ত্র পাওয়া যায়নি। তাই গত এক বছরেও কোন ফরমালিনের অস্তিত্ব না পাওয়ায় কী উপায়ে ফলে ফরমালিন শনাক্ত করা হবে সে বিষয়ে জানাতে বিসিএসআইআরকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন চিঠি দিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে রাজধানীর মাছ ও ফলের বাজারগুলোতে নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণাধীন বাজারগুলোর মাছ ও ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করে ওই বাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকেই প্রতিমাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সর্বশেষ তথ্যসহ প্রতিবেদনও পাঠাতে হয়। কিন্তু গত এক বছরে সিটি কর্পোরেশনের পরীক্ষায় কোন বাজারে ফরমালিন না পাওয়ায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ অবস্থায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন করণীয় নির্ধারণে গত ১৯ এপ্রিল জরুরী সভা ডাকে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে খাদ্য উৎপাদনকারী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যসহ নামের তালিকা দিতে বিএসটিআইকে চিঠি দেয়। একই সঙ্গে ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআরকেও চিঠি দেয়া হয়।
×