ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবাদী নারী চরিত্রের নাটক ‘খনা’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৪ জুন ২০১৬

প্রতিবাদী নারী চরিত্রের নাটক ‘খনা’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরুষশাসিত সমাজে এক প্রতিবাদী নারী লীলাবতী। প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা মেয়েটি সত্যের সঙ্গে কখনও আপোস করে না। সে জন্য তার কণ্ঠ রোধ করে দেয়া হয় চিরতরে। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এমনই এক আপোসহীন নারীর গল্প নিয়ে নির্মিত নাটক খনা। নাট্যদল বটতলার তৃতীয় এই প্রযোজনাটি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হয়েছে। নাট্য আঙ্গিকের সঙ্গে পা-ুলিপির যূথবদ্ধতায় আলোড়িত করেছে দর্শকদের। নাটকটি লিখেছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির ৫৮তম মঞ্চায়ন হয়। এক বিদূষী নারী খনা, যার অপর নাম হচ্ছে লীলাবতী। হাজার নারীর মতো পুরুষের জাল ছড়ানো বন্দী জীবনকে মেনে নিতে পারে না খনা। তার শ্বশুর জ্যোতিষী বরাহর গণনা মিথ্যা প্রমাণিত করে সে। পুত্রবধূর এই যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাবে হীনমন্যতা ও ঈর্ষায় ভোগে শ্বশুর। বরাহ তার ছেলে মিহিরকে দিয়ে খনা তথা লীলাবতীকে ক্ষমা চাইতে বলে। তবে লীলাবতী আপোস করতে জানে না। তাই খনা বা লীলাবতী তার সিদ্ধান্তে অটল, স্থির ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে। যা সে সত্য বলে মেনেছে জেনেছে তাই সে বলেছে। এই সত্যের জন্য তার জীবন বিপন্ন হতে পারেÑএটা জেনেও সে পিছু হটে না। সরে আসে না সত্য থেকে। স্বামী মিহিরকে ভালবেসেই বিয়ে করেছিল খনা। তবে সেই ভালবাসার মানুষটিই বাবার হুকুমে স্ত্রীর জিব কেটে দেয়। চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় সত্যবচন। সত্যের সঙ্গে থেকেছে বলেই ‘খনা’ এক বিদূষী নারী হয়ে উঠেছে কাল থেকে কালে। খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছরের আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধমাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূ-খ-ের বৃষ্টি, পলি, আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্ঠিক জ্ঞানের সঙ্কলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তার পরিণতি নির্মম, নাকি তিনি নারী হয়ে মিশেছিলেন চাষাভুষার সনে; সেই তার কাল? পুরুষতন্ত্র না শ্রেণী কাঠামো; নাকি উভয়ই দাঁড়ায় লীলাবতীর বিপ্রতীপে? মিহির বা প্রাকৃত লোকালয় কারোর পরোয়া না করা জীবন ত্যাগী নেশার ঘোর তাকে নিয়ে যায় দিগন্তের ওপার। খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যুনেশা তার সে নেশা কি এক রোখা জেদ? নাটকের কাহিনীতে এভাবেই খনা নিজেই নিজেকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। খনা বা লীলাবতী চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন সামিনা লৎফা নিত্রা। তার প্রেম, দ্রোহ, সারল্য, প্রশ্ন, উত্তর, বচনের পর বচন, জেদ ও বাচন ভঙ্গিমার অসামান্য প্রয়াসে দাঁড় করিয়েছেন চরিত্রটি। বরাহ চরিত্রে রূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। অন্য চরিত্রগুলোয় অভিনয় করেছেন ইভান রিয়াজ, শারমিন ইতি, তৌফিক হাসান, শেউতি শাহগুফতা, মিজানুর রহমান, আব্দুল কাদের, পঙ্কজ মজুমদার, বাকিরুল ইসলাম, ব্রাত্য আমীন, জিয়াউল আবেদীন রাখাল, সৌম্য সরকার, লায়কা বশীর, মাহফুজা সিদ্দিকা পলি, সাইদ, মোহাম্মদ তাহিম, রনি, ইফতিনান মাহমুদ ঈসা ও কাজী রোকসানা রুমা। মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন আবু আউদ আশরাফী। সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ব্রাত্য আমিন, শারমিন ইতি ও জিয়াউল আবেদীন রাখাল। পোশাক পরিকল্পন করেছেন তাহমিনা সুলতানা মৌ ও তৌফিক হাসান ভূঁইয়া। কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন মোহাম্মদ রাফি ও নাসির উদ্দিন নাদিম।
×