ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা পরবর্তী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারাই দেশটিকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিল ॥ সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৪ জুন ২০১৬

স্বাধীনতা পরবর্তী বৈজ্ঞানিক  সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারাই  দেশটিকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিল ॥  সৈয়দ আশরাফ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের স্বাধীনতা পরবর্তী জাসদের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন আসলে তারা ছিল এক শ’ ভাগ ভ-। ওই সময় দেশটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিল তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকরা। সোমবার বিকেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও কর্মশালা-২০১৬’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ওই সময় যদি তারা (জাসদ) বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব পরিবেশ সৃষ্টি না করত, তাহলে আজকের বাংলাদেশ একটা ভিন্ন বাংলাদেশ হতো। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে অনেক আগেই দেশটা একটা অর্থনৈতিক অগ্রসরকামী দেশ হতো। কিন্তু সেটা তাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। সৈয়দ আশরাফ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ছাত্রলীগের এই বর্ধিত সভা। একটা সময় ছিল আতঙ্ক। মুক্তিযুদ্ধের পরপরেই আমরা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত হয়েছিলাম। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটা সফল মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা মাত্র দেশটাকে স্বাধীন করেছি। আমরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে, কিন্তু সেই সুযোগটা আমাদের দেয়া হয়নি। আমরা একটা রাজনৈতিক সংগঠনের ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম। সেটা কী, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। দেশটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিল তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহকরা। পরবর্তীতে তারা জাসদ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন করে। এখন সেই দলটি সরকারের সঙ্গে আছে, এখন তাদের একজনকে রাষ্ট্রের মন্ত্রী দেয়া হয়েছে। যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন দিতে হবে। পূর্বের ইতিহাস জেনে ছাত্রলীগকে হঠকারীদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সিদ্ধান্তে যদি কেউ একবার ভুল করে, তার প্রায়শ্চিত্ত কিন্তু সারাজীবনেই করতে হয়। আজ জাসদের কী চেহারা, আর কী ভয়াবহ অবস্থা ছিল সে সময়। তিনি বলেন, দেশটাকে গড়ে তোলার কাজ জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা দেশটাকে আবার ছিন্ন ভিন্ন করার চেষ্টা করল। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা আজকে একটা সফল রাজনৈতিক দল হতে পারত এবং এটা একটা বিষয়ে শিক্ষা দেয়। হঠকারিতা, হঠকারীরা কোনদিনও কোন কনস্ট্রাকটিভ (গঠনমূলক) কাজ করতে পারে না। অতি বিপ্লবী-প্রতি বিপ্লবীরা হলো সবচেয়ে বেশি রি-এ্যাকশনিস্ট (প্রতিক্রিয়াশীল)। হঠকারীরা কোন সময় কনস্ট্রাকটিভ হয় না এবং তারা ভ-। আশরাফ আরও বলেন, যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন, আসলে তারা ছিল এক শ’ ভাগ ভ-। কারণ তৎকালীন আমাদের ছাত্রলীগের অনেক নেতা বা কলিগের (সহকর্মী) রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটাকে তারা ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং মাঝে মাঝে এগুলো আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ যারা হঠকারী তারা কোনদিনও কনস্ট্রাকটিভ হতে পারে না। তিনি বলেন, আজকের ছাত্রলীগ আর ওই সময়ের ছাত্রলীগ এক না। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এখন যে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের সময় কিছুই ছিল না। জাসদের সমালোচনা করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী আরও বলেন, এখন যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা, সেটাকে জাসদ নামক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীরা সম্পূর্ণভাবে সুপরিকল্পিতভাবে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশ যেন কোনদিনই একটি কার্যকরী রাষ্ট্র হতে না পারে। আজকের এই ইতিহাসটা আপনাদের বললাম। আপনারা হয়ত জানেন না আমরাও কিন্তু এই ইতিহাসকে কোনদিন ভুলতে রাজি হইনি। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অংশ যে, তখন কীভাবে ষড়যন্ত্র করে একটি সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবসময় আপনারা একটা দিকে লক্ষ্য রাখবেন। হঠকারিতা এবং হঠকারীদের কোনদিনও প্রশ্রয় দেবেন না। যারা বিপ্লব বিপ্লব বলে তারা কোনদিনও বিপ্লব করতে পারে না। যারা বড় বড় কথা বলে তাদের সাহস কিন্তু অত্যন্ত কম। তাই আপনাদের লেখাপড়া শেষ করতে হবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমানের সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইসহাক আলী খান পান্না, লিয়াকত শিকদার, সুজিত রায় নন্দী, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।
×