ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা যায়নি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১৪ জুন ২০১৬

আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করা যায়নি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এসপিপতœী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ক্লু উদ্ঘাটনে সদ্য গঠিত ৫টি টিমের সমন্বয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার। সিএমপির সভাকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য। এদিকে মিতু হত্যা মামলায় গেস্খফতারকৃত দুই আসামি আবু নসর গুন্নু ও শাহ জামান রবিনকে সিএমপির গোয়েন্দা দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। ৫টি টিম পৃথক পৃথক বিষয় নিয়ে এ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি প্রাপ্ততথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার কথা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য মিডিয়াকে জানিয়েছেন, সবকিছু তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুরে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক সিএমপির সভাকক্ষে ১৬ থানার ওসি, ৪ জোনের সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি), উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে আইজিপির নির্দেশে গঠিত ৫ কমিটিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়াও তদন্ত প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি আনার লক্ষ্যে দফায় দফায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে মিতু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলে এক উর্ধতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে। তবে এক্ষেত্রে কোনভাবেই যেন মূল অপরাধীরা পার পেতে না পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি। এদিকে আইজিপির নির্দেশনার পর গঠিত ৫ কমিটি প্রধান ও কমিটির সদস্যদের নিয়ে সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এর সভায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৫ থানার ওসি এবং শাহ আমানত বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার ইন্সপেক্টরসহ ৫টি টিমের প্রধানগণ ও এডিসি, ডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় মিতু হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ ৯ দিনেও ঘটনার মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারার বিষয়টি সিএমপির ব্যর্থতা বলে দাবি করেছেন কয়েক কর্মকর্তা। এদিকে প্রথম দফায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর রাকিব উদ্দিনকে বাদ দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। মামলার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহাগর গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামানকে মামলার তদন্তে অগ্রগতি আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মামলার ডকেট পর্যালোচনা করে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজের ওপর সূক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও নতুন করে কোন ধরনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা গেলে তা ৫ কমিটির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে গঠিত এ ৫ কমিটি অচিরেই চাঞ্চল্যকর এ মামলার ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারবে বলে আশাবাদী কমিটির সদস্যরা। এ ৫ কমিটির প্রধানদের মধ্যে অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেনÑ অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) নাজমুল আলম। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জেরার জন্য কমিটি প্রধান করা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) হুমায়ুন কবিরকে। কেস ডকেট পর্যালোচনাও পরীক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোঃ আবদুর রউফকে। ঘটনার সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ ও নতুন করে ভিডিও ফুটেজ কারেকশনের জন্য কমিটির প্রধান করা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (আইসিটি) জাহাঙ্গীর আলমকে। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনানকে। এদিকে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে বায়েজিদ থানাধীন শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে শাহ জামান রবিন ও হাটহাজারী পশ্চিম ফরহাদাবাদ এলাকার মূসাবীয়া দরবার শরীফ থেকে গ্রেফতারকৃত আবু নসর গুন্নুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ৫ টিমের সদস্যরা। গোয়েন্দা বিভাগে এ দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হবে। কোন ধরনের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যেন অভিযান পরিচালনা, নতুন কাউকে আটক কিংবা হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আইজিপি একেএম শহিদুল হক। অপরদিকে গত ৫ জুন সকালে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা ঘটনার পর মিডিয়ার পক্ষ থেকে পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিসিদের ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য আদায়ের চেষ্টা চালায় সংবাদকর্মীরা। কিন্তু এতে সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা অনেকটা বিরক্ত বোধ করার কারণে ৭ জুন থেকে সিএমপির মিডিয়া সেলে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু সিএমপি কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনার সংবাদকর্মীদের তথ্য প্রদানের এখতিয়ার রাখেন। কোনভাবেই যেন উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার এমনকি অন্য কোন কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা যেন চাঞ্চল্যকর এ মামলা তথ্য প্রদান না করেন সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় সিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে গত শুক্রবার ও রবিবার সিএমপির পক্ষ থেকে মিডিয়াকর্মীদের কোন ধরনের ব্রিফিং দেয়া হয়নি এ মামলার অগ্রগতি নিয়ে। সোমবার থেকে মিডিয়াকর্মীদের এ চাঞ্চল্যকর মামলার বিষয়ে ব্রিফিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিমএমপি কমিশনারের নির্দেশে। তবে বড় ধরনের কোন অভিযান পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি মূল অপরাধী গ্রেফতার বিষয়ে বিশেষ কোন তথ্য থাকলে তা পুনরায় মিডিয়াকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে অতিরিক্ত কমিশনারের পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সবগুলো বিষয় বিবেচনায় আনা হচ্ছে। কোনভাবেই যেন অপরাধীরা পার পেতে না পারে সে বিষয়ে ৫ কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষভাবে নজর রাখা হবে। এমনকি অতি দ্রুততার সঙ্গে মামলার তদন্ত কার্যক্রমে অগ্রগতি আনার পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতার ও বিশেষ কোন কিছু উদ্ঘাটন হলে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।
×