ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে শিক্ষকের সম্মানীতেও দুর্নীতি

উপকরণহীন গণশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৩ জুন ২০১৬

উপকরণহীন গণশিক্ষা

মীর নাসির উদ্দিন, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই চলছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানী থেকে এক হাজার টাকা করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জেলার ১৭১টি নতুন এই কেন্দ্রের অধিকাংশ শিক্ষকের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। বাকিদের টাকা আদায়েরও চলছে প্রবল চাপ। সদর উপজেলার গুহেরকান্দি মোল্লবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম ও এই মসজিদের গণশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ বায়েজিত জানান, গত মাসের বেতন ব্যাংকে জমা হওয়ার পরই ডেকে নিয়ে বেতনের অংশ থেকে এক হাজার টাকা জমা দিতে নির্দেশ দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে এই টাকা উত্তোলন করে ফ্লিড অফিসার মুজাহিদের কাছে জমা করা হয়। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন এভাবে বেতনের টাকা আত্মসাত করার ঘটনা এবারই প্রথম। এদিকে এবার বছরের ছয় মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষা উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট কাটাখালী কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা বোরহান উদ্দিন জানান, তাকে বেতনের এক হাজার টাকা জমা দিতে বাধ্য করা হয়। তিনি টাকা জমা করেন ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার হানিফের কাছে। এভাবেই অন্য ইমামদের সামান্য সম্মানীর এই টাকা ঘুষখোরদের হাত তুলে দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, শিক্ষকের বেতনের টাকা নেয়ার জন্য কত কৌশল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া শিক্ষা উপকরণ দেয়ার ব্যাপারে কৃর্তপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কাটাখালী বাজার জামে মসজিদের শিক্ষক কাজী হাবিব জানান, মাসিক বেতনের ২৩শ’ টাকার সম্মানীর মধ্য থেকে এক হাজার টাকা দাবি করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তাব্যক্তিরা। এই টাকা জমা না দেয়ার কারণে প্রবল চাপ দিচ্ছে। সুপারভাইজার হানিফ উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের বরাত দিয়ে এই টাকার জন্য অনবরত তাগাদা দিচ্ছেন। সদর উপজেলা গণশিক্ষা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সালাম জানান, তার আওতায় থাকা ৮টি নতুন মসজিদের গণশিক্ষা কেন্দ্র থেকে তার মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। পরে এই টাকা ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালকের কাছে জমা করেছেন। তিনি জানান, মদিনা বাজার জামে মসজিদ, উত্তর মহাখালী নবাব আলী ছৈয়াল বাড়ি জামে মসজিদ, উত্তর মহাকালী মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদ, কেওয়ার হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদ, রামশিং খানবাড়ি জামে মসজিদ, মোল্লকান্দি মহেষপুর পাঁচআনী জামে মসজিদ, রামপাল বড় দেওয়ানবাড়ি জামে মসজিদ ও মাকহাটি জামে মসজিদ কেন্দ্রে শিক্ষকদের কাছ থেকে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। সিরাজদিখান উপজেলা গণশিক্ষার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ফোরকান একইভাবে নতুন কেন্দ্রগুলোর শিক্ষকদের সম্মানীর টাকা থেকে টাকা উত্তোলন করে তা জমা করেছেন। টাকা আদায় করা হয়েছে ধামালিয়া মিরাপাড়া মাস্টার বাড়ি মক্তবের শিক্ষক সোপা আক্তার সিলা ও পশ্চিম আবিরপাড়া জামে মসজিদ মজিবুর রহমানসহ ২০/২২টি কেন্দ্র থেকে। লৌহজং উপজেলা থেকে ১৬ শিক্ষকের টাকা জমা হয়েছে। গজারিয়া উপজেলার ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনের ১৫ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে সহকারী পরিচালকের কাছে। গত ২৬ মে হোসেন্দি দরগাবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম ওমর ফারুক নিজ হাতে এই টাকা জমা দিয়ে গেছেন। আর বাকি দুজনের টাকা জমা হয়েছে গজারিয়া উপজেলার সুপারভাইজার মোস্তাফা রহমানের কাছে। তিনি জানান, জেলা অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে শীঘ্রই এই টাকা জমা দেয়া হবে। একইভাবে টঙ্গীবাড়ি ও শ্রীনগর উপজেলার মসজিদগুলোর নতুন কেন্দ্রের শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে ২০০৯ সালে বরখাস্ত হওয়া ফ্লিড অফিসার মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এই চাঁদা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তার ফোনে কয়েক দফা ফোন করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফোনটি রিসিভ করে তার সন্তান। এ ব্যাপারে সরকারী এই ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক সেলিম সরকার। প্রচ্ছন্নভাবে স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে উপ পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এছাড়া শিক্ষা উপকরণের জন্য কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কেন্দ্রগুলো কেন এই উপকরণ পায়নি তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ফাউন্ডেশনটির মাস্টার টেইনার মুফতি সারোয়ার হোসাইন এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শিক্ষক তথা ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়া, এই বিষয়টি দেখার এখতিয়ার আমার নয়।’ মুন্সীগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক (ডিডি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষকদের কোন সম্মানী আত্মসাত করা হয়নি। এছাড়া শিক্ষা উপকরণ ঢাকা কেন্দ্র থেকে কিনে দেয়। সেখান থেকে পাওয়া যায়নি বলে দেয়া হয়নি কেন্দ্রগুলোতে। এ ব্যাপারে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক হাসান জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন. ইমামদের টাকা কোনভাবেই কেটে নেয়ার কথা নয়। এটি তাদের বেতন। বিষয়টি আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। এখনই খোঁজ-খবর নিচ্ছে। যদি এ ধরসের কিছু ঘটে থাকে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×