ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কালকিনিতে প্রতিবন্ধী ধর্ষিত বাউফলে ট্রলারে আটকে সংখ্যালঘু মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ জুন ২০১৬

কালকিনিতে প্রতিবন্ধী ধর্ষিত বাউফলে ট্রলারে আটকে সংখ্যালঘু মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে সংখ্যালঘু পরিবারের মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া নদীর ভরিপাশা পয়েন্টে চর ঈশানের কাছে একটি ট্রলারে আটকে তাদের গণধর্ষণ করা হয়। শনিবার রাত দেড়টায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে নূর আলম (৩৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রতিবন্ধী যুবতীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে আলহাজ খন্দকার নামে এক বখাটে। মামলা করলে ধর্ষিতার পরিবারকে পুড়িয়ে মারা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের। জানা গেছে, বাউফলের কাছিপাড়া ইউপির উত্তর কাছিপাড়া গ্রামের এক সংখ্যালঘু মা (৩৮) তাঁর কলেজপড়ুয়া মেয়েকে (১৭) নিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলযোগে কালাইয়া শৌলা নূরজাহান গার্ডেনে যান। সেখানে তারা বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করেন। এরপর মা ও মেয়ে অন্য একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মা জানান, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক তাদের বাড়ির পথে না নিয়ে পার্শ্ববর্তী নাজিরপুর ইউপির নিমদি এলাকায় নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। নদীর তীরের একটি ট্রলার থেকে ছয়জন লোক এসে তাদের জোর করে ট্রলারে উঠিয়ে নদীর মধ্যে চলে যায়। কিছু দূরে যাওয়ার পর তিনজন তাকে ট্রলারের পাটাতনে এবং অন্য তিনজন মেয়েকে ট্রলারের ছইয়ে উঠিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এভাবে দফায় দফায় তাদের ধর্ষণ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে জানান, তেঁতুলিয়া নদীর চর ঈশানের কাছে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনিসহ কয়েক জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছিলেন। তখন নদীর মধ্যে একটি মেয়ের চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। এ সময় তারাও ডাকাডাকি করলে ২০/২৫ জন জেলে নৌকা নিয়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় কয়েকজন ট্রলার থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তারা ওই ট্রলারে উঠে বিবস্ত্র অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করেন। এ সময় তারা নূর আলম নামে একজনকে আটক করেন। ট্রলারটি তারা ভড়িপাশা খেয়াঘাটে আসেন। বাউফল থানার ওসি আযম ফারুকী জানান, তিনি শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কেশবপুর ইউপির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাবুর মাধ্যমে খবর পেয়ে ভড়িপাশা গিয়ে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করেন এবং আটক নূর আলমকে থানায় নিয়ে আসেন। রাত দুটার দিকে মা ও মেয়েকে বাউফল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন। আটক নূর আলম জানায়, তার বাড়ি নাজিরপুর ইউনিয়নের রামনগর তাতেরকাঠি গ্রামে, বাবার নাম রশিদ মল্লিক। ঘটনার দিন সহিস্যা গ্রামের রহিম মীর তাকে মোবাইল ফোনে ট্রলারের মেশিন সারানোর কথা বলে নিমদি নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে সে ছাড়াও সহিস্যা গ্রামের কাদের মৃধার ছেলে হারুন মৃধা (৪৫), রায় তাতেরকাঠি গ্রামের আমির হাওলাদারের ছেলে সোহেলসহ ছয়জন ছিল। হারুন মৃধা ওই মহিলা ও তার মেয়েকে খবর দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে নিমদি নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। এরপর তাদের ট্রলারে তুলে মাঝ নদীতে নিয়ে সবাই মিলে কয়েক দফা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ব্যাপারে বাউফল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষিত মা ও মেয়েকে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবন্ধী যুবতীকে ধর্ষণ ॥ মাদারীপুরের কালকিনির এনায়েতনগর এলাকায় রবিবার সকালে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী যুবতীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে আলহাজ খন্দকার নামের এক লম্পট যুবক। ঘটনাটি ধামাচাঁপা দিতে স্থানীয় কয়েকজন মাতব্বর উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় কোন মামলা করা হলে ধর্ষিতার পরিবারকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে ধর্ষকের লোকজন। জানা গেছে, এনায়েতনগর গ্রামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী যুবতী মেয়ে মাঠে ছাগল চড়াতে যায়। এ সময় একই গ্রামের হবি খন্দকারের লম্পট ছেলে আলহাজ খন্দকার জোর করে তাকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই প্রতিবন্ধীর চিৎকার শুনে সেনোয়ারা বেগম নামে এক মহিলা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরে ধর্ষিতাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে আলহাজ খন্দকার পলাতক। ধর্ষণের বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানাজানি হলে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় মাদারীপুর কোর্টে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অপরদিকে মামলা না করার জন্য ধর্ষকের পরিবার বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে অসহায় ওই ধর্ষিতার পরিবারকে। ধর্ষককের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে ধর্ষিতার পরিবারে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মাতবর মোকসেদ সরদার, সেলিম সরদার, মোছাদ্দেক সরদার, মনির খন্দকার ও সাহাবুদ্দিন মল্লিকসহ ১০/১২ জন পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতার মা বলেন, ভয়ে এখন আমরা মামলা করতে সাহস পাচ্ছি না। আমার মেয়ের ধর্ষণকারীর সঠিক বিচার চাই। এ ব্যাপারে ধর্ষক আলহাজ খন্দকারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কালকিনি থানার ওসি কৃপাসিন্দু বালা বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×